প্যান্ডোরা পেপারসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর দুই স্বজন

প্যান্ডোরা পেপারসে এই ছবি ব্যবহার করেছে আইসিআইজে
প্যান্ডোরা পেপারসে এই ছবি ব্যবহার করেছে আইসিআইজে

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপক্ষের দুই আত্মীয়ের নাম রয়েছে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া প্যান্ডোরা পেপারসে। এই দুজন হলেন তাঁদের চাচাতো বোন নিরুপমা রাজাপক্ষে ও তাঁর স্বামী থিরুকুমার নাদেসান।  

করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত পানামা, দুবাই, মোনাকো, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো দেশ ও অঞ্চলের কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে অর্থ রেখেছেন ও গোপন লেনদেন করেছেন, সম্প্রতি সেই তথ্য ফাঁস হয়েছে। নতুন এই ফাঁসের ঘটনার নাম দেওয়া হয়েছে প্যান্ডোরা পেপারস। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে বাবিসের মতো নেতাদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাবেক-বর্তমান মিলিয়ে অন্তত ৩৫ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের নাম এসেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, আমলা, জেনারেল ও নানা ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অবৈধ লেনদেনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) উদ্যোগে ৬০০ জনের বেশি সাংবাদিক এসব নথি বিশ্লেষণ করেন।

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো বোন নিরুপমা রাজাপক্ষে ও তাঁর স্বামী থিরুকুমার শেল কোম্পানির মাধ্যমে লন্ডন ও সিডনিতে বিনিয়োগ ও বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন।

আইসিআইজের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ‘গোপনে নাদেসান অন্য শেল কোম্পানি ও ট্রাস্ট গঠন করেছে। শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে বিদেশি কোম্পানি থেকে লোভনীয় কাজের প্রস্তাব পেতে এবং শিল্পকর্ম কিনতে তিনি এ কোম্পানিগুলো ব্যবহার করতেন।’

সিঙ্গাপুরভিত্তিক অফশোর সার্ভিস প্রোভাইডার এশিয়াসিটি ট্রাস্টের কাছে পাঠানো গোপন ই-মেইলে নাদেসান জানিয়েছিলেন ২০১১ সাল নাগাদ তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি ডলারের বেশি। তবে স্বতন্ত্রভাবে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি আইসিআইজে। দীর্ঘসময় ধরে নাদেসানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছে এশিয়াসিটি ট্রাস্ট।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যাসিফিক কমোডিটিজ নামের একটি শেল কোম্পানি ২০১৮ সালে জেনেভা ফ্রিপোর্ট নামের গুদামে ৩১টি চিত্রকর্ম ও আরও কিছু দক্ষিণ এশীয় আর্ট পিস স্থানান্তর করেছিল। জেনেভা ফ্রিপোর্ট হলো অতিনিরাপদ একটি গুদাম যেখানে মালামাল রাখতে কর কিংবা শুল্ক গুনতে হয় না। প্যান্ডোরা পেপারসের তথ্য অনুযায়ী, নাদেসান এই প্যাসিফিক কমোডিটিজ কোম্পানির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া অন্য যে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নাদেসানের নাম রয়েছে সেগুলো হলো, কনকর্ড অ্যাসেটস, প্যালিন ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, নাদেসান ট্রাস্ট, দ্য শ্রী নিথি ট্রাস্ট, চাল্লান অয়েল এক্সপ্লোরেশন লিমিটেড এবং রোসেট্টি লিমিটেড। আর চাল্লান অয়েল এক্সপ্লোরেশন লিমিটেড ও রোসেতি লিমিটেডের সঙ্গে নিরুপমার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়াসিটি ট্রাস্ট নাদেসানের অফশোর কোম্পানি ও ট্রাস্টগুলোর কোনো কোনোটির ব্যবস্থাপনার কাজ করত। এসব কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। নিরুপমা রাজাপক্ষে ও নাদেসান—দুজনই তাঁদের ট্রাস্ট ও কোম্পানির ব্যাপারে আইসিআইজের প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়াসিটি ট্রাস্ট নাদেসানের কিছু অফশোর কোম্পানি ও ট্রাস্টগুলোর ব্যবস্থাপনার কাজ করত। এসব কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। নিরুপমা রাজাপক্ষে ও নাদেসান—দুজনই তাঁদের ট্রাস্ট ও কোম্পানির ব্যাপারে আইসিআইজের প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
২০১৬ সালে বিলাসবহুল একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হয় নাদেসান। বলা হয়ে থাকে, ওই বাড়ির সঙ্গে বর্তমান অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তখন নাদেসানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন