বিশ্বখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর আঁকা বেশ কিছু চিত্রকর্ম চুরি হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো কোথায় আছে, এখনো সে বিষয়ে কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি এ রকমই এক চিত্রকর্মের খোঁজ পাওয়া গেছে ফিলিপাইনে।
ধারণা করা হচ্ছে, সন্ধান পাওয়া ওই চিত্রকর্ম পিকাসোর হারানো চিত্রকর্মগুলোর একটি। আর তা রয়েছে ফিলিপাইনের সাবেক ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের বাড়িতে। ইমেলদা দেশটির স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের স্ত্রী এবং সম্প্রতি সে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে ভূমিধস জয় পাওয়া ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ‘বংবং’–এর মা।
দ্য গার্ডিয়ান–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোস ফিলিপাইন থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার সরিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে তাঁর পরিবারের অনেক গোপন সম্পদ আছে বলে রয়েছে গুঞ্জন। তাঁর ছেলে ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর পিকাসোর খোয়া যাওয়া ওই চিত্রকর্মের সন্ধান পাওয়ার খবর সামনে আসে। এ নিয়ে মার্কোস পরিবারকে ঘিরে দেশটিতে নতুন করে ছড়িয়েছে উদ্বেগ। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই পরিবার ক্ষমতায় ফিরে তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা জোরদার করবে।
প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস দুই দশকের বেশি সময় ফিলিপাইন শাসন করেন। ১৯৮৬ সালের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন তিনি। তাঁর শাসনামলে ফিলিপাইনে তিন হাজারের বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বাবার ক্ষমতাচ্যুতির সাড়ে তিন দশক পর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন মার্কোস জুনিয়র।
নির্বাচনে জেতার পরপরই মার্কোস জুনিয়র মা ইমেলদা মার্কোসের বাড়িতে যান। পরে সেখানে তোলা ছবি মার্কোস পরিবার প্রকাশ করে। তাতেই পাবলো পিকাসোর চুরি যাওয়া ‘ফেম কোচ সিক্স’ চিত্রকর্মের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে এটি প্রকৃত চিত্রকর্ম, নাকি সেটির রেপ্লিকা (নকল) তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফিলিপাইনের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সাল থেকে খোয়া যাওয়া যে আট চিত্রকর্ম উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এটি তার একটি। তবে মার্কোস জুনিয়র দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই চিত্রকর্ম এখন উদ্ধার করা সম্ভব হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
গার্ডিয়ান–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কোস জুনিয়রের বাবা ফার্দিনান্দ মার্কোস ১৯৬৫ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হন। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন। তিন বছর পর দেশে সামরিক আইন জারি করেন তিনি। তাঁর দাবি, কমিউনিস্টদের (সমাজতন্ত্রী) হাত থেকে জাতিকে বাঁচাতে সামরিক আইন জারির বিকল্প ছিল না।
স্বৈরশাসক হিসেবে ফার্দিনান্দ মার্কোস ১৪ বছর দেশ শাসন করেন। তাঁর শাসনামলে তিন হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। কথিত আছে, অন্যদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিতে লোকজনকে মেরে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হতো। ফিলিপাইনে তখন অনেক মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছিলেন। অথচ মার্কোসের পরিবার নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় সম্পত্তি কেনে। এই পরিবারের সদস্যরা বিলাসী জীবন যাপন করছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
ফার্দিনান্দ মার্কোসের পতনের পর একপর্যায়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ফিলিপাইনের রাজনীতিতে আবার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তাঁরা মার্কোসের স্বৈরশাসনামলকে ফিলিপাইনের ‘স্বর্ণযুগ’ বলে প্রচার চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তের পরিবার মার্কোসদের মিত্র বনে যায়।
ফিলিপাইনে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের তদন্ত ও পুনরুদ্ধারে প্রতিষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট কমিশন অন গুড গভর্নমেন্টের সাবেক কমিশনার রুবেন ক্যারানজা বলেন, ছবিতে দেখা চিত্রকর্মটি পিকাসোর প্রকৃত চিত্রকর্ম কি না, তা স্পষ্ট নয়। সাবেক ফার্স্ট লেডির নকল চিত্রকর্ম কেনার ও তা প্রদর্শনের অভ্যাস রয়েছে।
রুবেন আরও বলেন, সাবেক ফার্স্ট লেডি প্রকৃত চিত্রকর্ম দেখাচ্ছেন, নাকি শুধু লোকদেখানোর জন্য তা প্রদর্শন করছেন, তা স্পষ্ট নয়। তিনি যদি ভুয়া চিত্রকর্ম দেখিয়ে থাকেন, তাহলে তা ফিলিপাইনবাসীর জন্য ভালো উদাহরণ নয়।
অনেকে মনে করেন, মার্কোস পরিবারের কাছে বিপুল সম্পদ রয়েছে। চিত্রকর্মটি পিকাসোর চুরি হওয়া চিত্রকর্ম—এ ধারণা সত্য হলে মানুষের মধ্যে পরিবারটি সম্পর্কে আবার অবিশ্বাস দানা বাঁধা শুরু করবে। এর আগে ২০১৪ সালে ফিলিপাইন সরকার ‘পিকাসোর একটি ছবি’ জব্দ করে দেখেছিল, তা নকল। তাই চিত্রকর্মটি আবার ফেরত দেওয়া হয়।
মার্কোস পরিবারের বিরুদ্ধে এখনো চুরি করা সম্পদ নিয়ে কয়েক ডজন মামলা চলছে। ইমেলদা ২০১৮ সালে সাতটি মামলায় আপিল করেন।