২৫ জুন বাংলাদেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে সামনে রেখে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি টাইমস। ‘স্টোরি অব বাংলাদেশ’স পদ্মা ব্রিজ: মোর দ্যান জাস্ট আ ব্রিজ’ শিরোনামে নিবন্ধটি লেখেন ড. মালিকা-ই-আবিদা খাট্টাক।
পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ ও গবেষক আবিদা খাত্তাকের আগ্রহের জায়গা আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কা। নিবন্ধে নানা বাধা ও ষড়যন্ত্র ডিঙিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। পদ্মা সেতুকে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের চিহ্ন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো।
নিবন্ধের শুরুতে পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের স্বপ্ন বলে উল্লেখ করেন আবিদা খাত্তাক। তিনি মনে করেন, এ সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শিগগিরই এসব মানুষের দুর্দশার অবসান হবে। খাত্তাক লেখেন, বহুমুখী সেতুটি যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যান চলাচলকে সহজ করবে এবং এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে শুরু করে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
করোনা মহামারির মধ্যেও সেতুর নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন খাত্তাক। তিনি লেখেন, যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয় তখন পুরোদমে নির্মাণকাজ চলছিল। তবে শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে এক দিনের জন্যও কাজ বন্ধ থাকেনি। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি চলেছে সেতুর কাজ। সবাই যখন দেখল যে তাঁর (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে সেতুর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কিছু অসাধু ষড়যন্ত্রকারী গুজব ছড়াতে শুরু করেন। গুজব ছড়ানো হয় যে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য মানুষের মাথা প্রয়োজন। সরকারও দক্ষতার সঙ্গে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
মেট্রোরেলসহ সরকারের আরও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রসঙ্গও টেনেছেন আবিদা খাত্তাক। নিবন্ধে তিনি লেখেন, শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে শুধু যে পদ্মা সেতুই নির্মিত হচ্ছে তা নয়, মেট্রোরেল এবং দেশের সবচেয়ে বড় টানেলের কাজও শেষের দিকে। এ বছরই তা জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আরও অনেক প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি প্রকল্প, যমুনা সেতুর ওপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ, পায়রা সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর উল্লেখযোগ্য। তবে সব কটির মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজটি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং।
পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের বড় সম্পদ বলে উল্লেখ করেছেন খাত্তাক। তিনি লেখেন, পদ্মা সেতু হলো বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মধ্য দিয়ে দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় অংশের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় অংশ যুক্ত হবে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটির কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। আজ গৌরবের সেতু দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সাহসী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে একজন আত্মবিশ্বাসী, প্রত্যয়ী রাষ্ট্রনেতা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
খাত্তাক মনে করেন এ সেতু খুলে দেওয়ার পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করবে। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো পাল্টে যাবে। কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চল থেকে রাজধানীর দিকে কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অধ্যায় তৈরি করবে এ সেতু। নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য ভালো দাম পাবেন কৃষকেরা। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে। তিনি আরও মনে করেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অংশ হবে পদ্মা সেতু।
যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে বিপ্লব হবে। সেতুটির মধ্য দিয়ে পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন হবে। এ সেতুটি ঘিরে রিসোর্ট, হোটেল ও রেস্তোরাঁ তৈরি হবে। সেখানে বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। আর এর মধ্য দিয়ে বিদেশিদের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি আরও পরিচিত হয়ে উঠবে। পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে দেশের জিডিপি বাড়বে, মাথাপিছু আয় বাড়বে।
নিবন্ধে বলা হয়, সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল সংযোগ দৃঢ় করবে। মানুষ ঢাকা থেকে কম সময়ে স্বস্তির ভ্রমণ করতে পারবে। সেতুর কাছাকাছি বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্থাপনা গড়ে উঠবে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। খাত্তাক মনে করেন, পদ্মা সেতুর নাম উচ্চারণ করতে গেলে শেখ হাসিনার নামও উচ্চারণ করতে হবে। সেতুর নামকরণ তাঁর নামে না হলেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ জানবে যে তাঁর কারণেই সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে।
নিবন্ধের একেবারে শেষের দিকে আদিবা খাত্তাক লেখেন, শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের বড় চ্যালেঞ্জটি নিয়েছেন এবং জয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে এ সেতু অনন্য ভূমিকা পালন করবে। এ সেতু বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং জাতির আত্মবিশ্বাস বাড়াবে বলেও মনে করেন তিনি।