পতাকা সরানোকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় চারজন নিহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জেলার সন্দেশখালীর ন্যাজাটের হাটগাছিতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বোমা বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি হয়। বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলার পাশাপাশি লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বিজেপির কর্মী। আর একজন তৃণমূলের কর্মী। তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত তিন বিজেপির কর্মী হলেন সুকান্ত মণ্ডল, প্রদীপ মণ্ডল ও তপন মণ্ডল। নিহত তৃণমূল কর্মী হলেন কাইয়ুম মোল্লা।
বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর দাবি, এই সংঘর্ষে তাঁদের পাঁচজন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। বাকি দুজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। পুলিশের সহায়তায় তৃণমূল লাশগুলো সরিয়ে নিয়েছে।
সায়ন্তন বসুর ভাষ্য, তাঁদের চারজন কর্মী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, সংঘর্ষে বিজেপির হাতে তাঁদের কর্মী কাইয়ুম মোল্লা নিহত হয়েছেন। তাঁদের দলের দুজন এখনো নিখোঁজ। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৮ জন।
গতকাল সন্ধ্যায় সন্দেশখালীর ন্যাজাটে তৃণমূলের বুথ কমিটির বৈঠক হচ্ছিল। এ সময় পার্টি অফিসে লাগানো পতাকা সরানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে গ্রামের বহু বিজেপি কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়। ভাঙচুর হয় দোকানপাট, হ্যাচারি। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
অবশ্য ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে দুই দল ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে।
বিজেপির সায়ন্তন বসুর ভাষ্য, প্রথমে ওই এলাকায় তৃণমূলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বিজেপির পতাকা খুলতে শুরু করে তৃণমূল। তার জেরেই গোলমালের সূত্রপাত।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ভাষ্য, বৈঠক শেষে মিছিল বের করেছিল তৃণমূল। সেই মিছিলে হামলা চালিয়ে তৃণমূল কর্মী কাইয়ুম মোল্লাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপরই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা মুকুল রায় গতকাল রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূলের নেতৃত্বে বিজেপির ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় তাঁদের কর্মীরা হতাহত হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল রাতেই রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘তৃণমূলের এই সন্ত্রাস এবার বন্ধ করতে হবে। পরাজয়ের পর ওরা উন্মাদ হয়ে গেছে। মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করায় ওরা তা মেনে নিতে পারছে। তাই ওরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শুরু করেছে হামলা। এই হামলা আমরা বন্ধ করবই।’