ভারতের লোকসভা নির্বাচন দ্বারপ্রান্তে। আগামী এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠেয় লোকসভার ৫৪৩ আসনে নির্বাচন। ২০২১ সালে হবে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪ আসনের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। এসব নির্বাচন মাথায় রেখে এখন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় শক্তিশালী দল বিজেপি শাসক দল তৃণমূলকে ভাঙার খেলায় নেমে পড়েছে।
রাজ্য বিজেপির লক্ষ্য তৃণমূলের নেতাদের ভাগিয়ে বিজেপিতে আনা। কারণ, রাজ্যে এখন তৃণমূলের পরই শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিজেপি। সে কথা প্রকারান্তরে স্বীকারও করে নিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই তৃণমূল এখন তাদের রাজনীতির লক্ষ্য স্থির করেছে বিজেপিকে হটানোর।
বিজেপি তাদের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। মেতে উঠেছে তৃণমূল ভাঙার খেলায়। অবশ্য একসময় তৃণমূলও একই খেলায় মেতেছিল। তারা কংগ্রেস ও বাম দল ভাঙতে তৎপর হয়েছিল।
ইতিমধ্যে তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খান, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাবেক রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডাসহ দলের বহু নেতা-কর্মীকে বিজেপি তাদের দলে ভিড়িয়ে নিয়েছে।
বিজেপির তৃণমূল ভাঙার খেলা নিয়ে সরব হয়েছেন দলের নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন টাকা নিয়ে আসবেন অনেকেই। সেই প্রলোভনে কেউ পা দেবেন না। দলে থেকেই লড়তে হবে বিজেপির বিরুদ্ধে। মনে রাখবেন, আমাদের এই রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের সব কটি আসনে জিততে হবে। আমরা ৪২-এ ৪২-ই চাই।’
বিজেপি-তৃণমূলের এই লড়াইয়ের মধ্যে গতকাল সোমবার কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতা মুকুল রায় নিজেই স্বীকার করেন, ‘হ্যাঁ, আমি বহু তৃণমূল নেতাকে বিজেপিতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এতে সমস্যার কী আছে? যেকেউ যেকোনো রাজনৈতিক দলে যোগদানের আবেদন জানাতে পারেন। এতে দোষ কী? আমি তো ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও ফোন করে বিজেপিতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’
মুকুল রায় আরও বলেছেন, তৃণমূল থেকে বহু নেতা বিজেপিতে যোগদানের জন্য পা বাড়িয়ে রেখেছেন। কিন্তু মিথ্যা মামলার ভয়ে কেউ এগোতে পারছেন না। সময় এলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মুকুল রায় বলেন, ‘এই তো আমি, বিজেপিতে যোগদানের আগে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলাও ছিল না। বিজেপিতে যোগদানের পর রাজ্যের বিভিন্ন থানায় আমার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচারের মতো অপরাধে ২৯টি মামলা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর প্রশাসনিক কর্তারা টের পেয়ে যাবেন কত শক্তি বিজেপির। এরপরেই শুরু হবে তৃণমূলের ভাঙন। সেই ভাঙনের ঢেউ জোরে আঘাত করবে আগামীর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে।’