পদত্যাগ করছেন না থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা
ছবি : রয়টার্স

রাজতন্ত্রের ক্ষমতা খর্ব ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে থাইল্যান্ডে বিক্ষোভ চলছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার পদত্যাগ চাইছেন বিরোধী দলের নেতারা।

বিক্ষোভকারীদের নিয়ে আলোচনায় বসছেন ওচা। কিন্তু বিরোধী দলের চাওয়া মোতাবেক পার্লামেন্ট সেশনে পদত্যাগের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট অধিবেশনে বলেছেন, ‘আমি সমস্যার মধ্যে ছেড়ে পালাব না। আমাদের দেশ যখন সমস্যায় পড়েছে, তখন পদত্যাগ করে আমার দায়িত্ব ছেড়ে যাব না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে প্রায়ুথ চান-ওচা ২০১৪ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটির ক্ষমতায় বসেন। দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ পুরোপুরি তাঁর সামরিক জান্তার অধীনে।

কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ করছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার পদত্যাগের দাবিতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাজধানীতে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করছেন। তাঁরা একই সঙ্গে রাজার ক্ষমতা খর্ব করার দাবিও জানাচ্ছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধন, নতুন নির্বাচন এবং অধিকারকর্মী ও সরকারের সমালোচকদের হয়রানির অবসান ও গ্রেপ্তার হওয়া বিক্ষোভকারীদের মুক্তির দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা। ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী প্রাউথ চান-ওচার পদত্যাগের দাবিতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাজধানীতে জড়ো হন। টানা তিন মাস ধরে চলমান সরকার ও রাজশাসনবিরোধী বিক্ষোভ থামাতে ১৫ অক্টোবর হঠাৎ করেই দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করে থাই সরকার। ব্যাংককে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ থামাতে ঘোষণা করা জরুরি অবস্থা ব্যর্থ হওয়ার পর ২১ অক্টোবর গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় থাইল্যান্ড।

বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের প্রাসাদ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। বিক্ষোভ থেকে রাজক্ষমতা পুনর্গঠনের দাবি জানানো হচ্ছে, যা থাইল্যান্ডে স্পর্শকাতর ঘটনার বিষয় হিসেবে দেখা হয়। থাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী রাজতন্ত্রের সমালোচনার শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সংসদের বিরোধী দলের সদস্যরা প্রায়ুথকে রাজতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য বন্ধ করে পদত্যাগ করতে বলছেন। সমালোচকদের ভাষ্য, তিনি বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি করেন। তবে প্রাউতের দাবি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা দেশের জন্য একটি নতুন সংবিধানও চাইছেন। বর্তমান সংবিধান লেখা হয়েছিল ওই সামরিক শাসন চলাকালে।

বিক্ষোভাকারী নেতাদের মধ্যে অন্যতম তাত্তেপ ফোর্ড রুয়াংপ্রাপাইকিশেরি সংসদ অধিবেশনকে অকেজো বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রায়ুথ বলেছেন, তিনি সমস্যা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনে রাজি আছেন। তবে বিক্ষোভকারীদের কার সঙ্গে কথা বলবেন তা নিশ্চিত নন। কারণ সেখানে কেউ নেতা নেই, আবার সবাই নেতা।

এ মাসে জরুরি অবস্থা জারির সময় বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে থাইল্যান্ড সরকার।
দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের তুলনায় রাজতন্ত্র সমর্থনকারীদের সমাবেশে জনসমাগম তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে। হলুদ জামা পরে হাজারখানেকের বেশি সমর্থক গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকক পার্কে জমা হন।