ভারতের পুলওয়ামায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের (জেইএম) হামলার জেরে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সম্পর্কের টানাপোড়েন অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার পাকিস্তানকে খোঁচা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দিয়ে নয়াদিল্লি বলেছে, নয়া পাকিস্তান গড়তে হলে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও নয়া পদক্ষেপ নিতে হবে।
নয়া পাকিস্তান গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বছর সে দেশে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। গত শুক্রবার এক সমাবেশে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে দেশের বাইরে হামলা কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। তাই তাঁর সেই নির্বাচনী স্লোগান তুলে ধরেই এবার পাকিস্তানকে খোঁচা দিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
পুলওয়ামা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল দিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার। সেখানে ইমরান খানের নির্বাচনী স্লোগান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নয়া চিন্তাভাবনাকে আশ্রয় করে নয়া পাকিস্তান গড়ে উঠছে বলে দাবি ওদের। তাই যদি হয়, তাহলে দেশের মাটিতে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেও নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘২০১১ সালের ডিসেম্বরে আমাদের পার্লামেন্টে হামলা, ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে হামলার পর নেওয়া একই পাণ্ডুলিপির প্রয়োগ দেখছি আমরা। পাকিস্তান জঙ্গি ও জঙ্গিগোষ্ঠীকে বিতাড়নের দাবি করেছে, কিন্তু তা কেবল কাগজেই থাকে। বস্তুত জঙ্গিগোষ্ঠী ও জঙ্গিরা কোনো বাধা ছাড়াই তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে।’ এ ছাড়া ভারত ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের যুক্তিসংগত উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান এ বিষয়ে কোনো আন্তরিকতা দেখায়নি বলে দাবি করেছেন রবীশ কুমার।
পাকিস্তানের বালাকোটের যে এলাকায় ভারত বিমান হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে, সেই এলাকায় ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিকদের যেতে দেয়নি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, পাকিস্তান সাংবাদিকদের সেখানে যেতে দেয়নি কারণ অনেক কিছুই তাদের লুকানোর রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোটের ওই হামলায় জেইএমের শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে তখন বলেছিলেন, ওই দিনের হামলায় জেইএমের প্রশিক্ষণ শিবিরে অনেক সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক, জ্যেষ্ঠ কমান্ডার এবং কয়েক দল জিহাদি নিহত হয়েছে। তবে ভারতের এই দাবি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। হাই রেজল্যুশনের স্যাটেলাইট ইমেজেও দেখা গেছে, মাদ্রাসা (ভারত যেটিকে শিবির বলছে) অক্ষত রয়েছে। মাদ্রাসাটি জইশ-ই-মুহাম্মদের তত্ত্বাবধানে চলত।
১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জওয়ান নিহত হন। দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহম্মদ। ভারতও সে-সংক্রান্ত নথিপত্র ইসলামাবাদের হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও হামলায় জইশের ভূমিকা অস্বীকার করে আসছে ইমরান খানের প্রশাসন। তারও তীব্র সমালোচনা করেন রবীশ কুমার। তিনি বলেন, জইশ-ই-মুহাম্মদ নিজ থেকে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারপরও হামলায় তাদের ভূমিকা অস্বীকার করছে পাকিস্তান। তাদের আড়াল করছে। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
এদিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বলেছে, পাকিস্তানের একটি ড্রোন রাজস্থান দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বিএসএফ ড্রোনটি শনাক্ত করে তা ভূপাতিত করার চেষ্টা করলে সেটি পাকিস্তানে ফিরে যায়। বিএসএফের এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রীগঙ্গানগরের কাছে হিন্দুমালকতের সীমান্তে গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে একটি ড্রোন ভারতে ঢোকার চেষ্টা করে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তা দেখে গুলি করা শুরু করে সেটিকে ফিরে যেতে বাধ্য করেন। ওই এলাকার বাসিন্দারাও বলেন, তাঁরা প্রচণ্ড গুলিবর্ষণের শব্দ শুনেছেন।