ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক যুগের শাসনের অবসান ঘটছে কি না, তা জানা যাবে রোববার। নেতানিয়াহুকে হটাতে গঠিত বিরোধী দলগুলোর জোটের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে কি না, তার পরীক্ষা হবে ওই দিন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ পার্লামেন্টের স্পিকার ইয়ারিভ লেভিন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১৩ জুন রোববার পার্লামেন্টের এক বিশেষ অধিবেশনে নতুন সরকারের ওপর ভোট ও বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।
ওই আস্থা ভোটে জোট যদি ১২০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়, তাহলে নতুন করে নির্বাচন হবে। আর আটদলীয় জোট টিকে গেলে নেতানিয়াহুর এক যুগের শাসনের অবসান হবে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের রাজনীতিতে ডানপন্থী আধিপত্য ধরে রেখেছেন নেতানিয়াহু। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা ও আগ্রাসন চালানোর পথ বেছে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত মাসেও ফিলিস্তিনের গাজায় টানা ১১ দিন বিমান থেকে বোমা ছুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের ওই হামলায় আড়াই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন।
এই হামলা চালানোর পরও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাননি নেতানিয়াহু। তাঁকে হটাতে জোট বেঁধেছে বাম, ডান ও মধ্যপন্থী দলগুলো। নেতানিয়াহুর একসময়ের ঘনিষ্ঠজন এবং তাঁর সরকারে কয়েক দফায় মন্ত্রিত্ব করা নাফতালি বেনেত মধ্যপন্থী দল ইয়েস আতিদের সঙ্গে জোট গড়তে রাজি হওয়ায় গত সপ্তাহে নেতানিয়াহুর বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজতে শুরু করে।
এখন এই জোট পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারলে ইসরায়েলের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন উগ্র জাতীয়তাবাদী দল ইয়েমিনা পার্টির নেতা বেনেত। পার্লামেন্টে তাঁর দলের মাত্র ছয়টি আসন থাকলেও গত মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দল ইয়েস আতিদের সরকার গঠনের জন্য তাঁর সমর্থন জরুরি হয়ে পড়েছিল। ইয়েস আতিদের নেতা ইয়ার লাপিদের সঙ্গে নাফতালি বেনেতের যে চুক্তি হয়েছে তাতে চার বছর মেয়াদের এই সরকারে দুজন দুই বছর করে প্রধানমন্ত্রিত্ব করবেন। প্রথম দুই বছর বেনেত, তারপরে প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিদ।
এই জোটে ইসরায়েলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের দল ইউনাইটেড আরব লিস্ট (ইউএএল) ও রয়েছে। ২ জুন জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনার পর ইয়ার লাপিদ দেশটির প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনকে ঐকমত্যের খবর জানান।
এরপর এক সপ্তাহ ধরে এই জোট ভাঙতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন লিকুদ পার্টির নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। টুইটারে বিরোধী জোটের সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, ‘ডানপন্থী দলের যেসব আইনপ্রণেতা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই এই বিপজ্জনক বামপন্থী সরকারের অবশ্যই বিরোধিতা করা উচিত।’
নেতানিয়াহুবিরোধী জোটে তিনটি ডানপন্থী দল, দুটি মধ্যপন্থী ও দুটি বামপন্থী দলের সঙ্গে আরব ইসলামিক রক্ষণশীল দল ইউএএল রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের রাজনীতিতে তিক্ত বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত বিরল। নেতানিয়াহুর বিরোধীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটা সতর্কবার্তা ছিল।
নেতানিয়াহু বামপন্থী ও আরবীয় আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কাজ করতে অস্বস্তিতে থাকা ডানপন্থী নেতাদের খোঁচা দিয়ে জোটটি ব্যর্থ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর লিকুদ পার্টির উগ্র সমর্থকেরা ডানপন্থী নেতাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের জোট সরকারে যোগ দেওয়াকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে মন্তব্য করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট সদস্যদের সুরক্ষায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।