আফগানিস্তানে নারীশিক্ষায় তালেবানের নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে মনে করছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আফগান নারীরা এখন জানে, ‘ক্ষমতায়নের’ মানে কী। খবর আল-জাজিরার।
গত সপ্তাহে মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়গুলো খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বন্ধ ঘোষণা করে তালেবান সরকার। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্কুলছাত্রী ও নারীরা রাজধানী কাবুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে গতকাল শনিবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
এদিকে শনিবার কাতারে দোহা ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় মালালা বলেন, ‘আমি মনে করি, ১৯৯৬ সালে নারীশিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ তালেবানের জন্য তুলনামূলক সহজ ছিল। কিন্তু এ সময়ে এসে এটা কঠিন। কারণ, নারীরা দেখেছেন, শিক্ষিত হওয়ার মানে কী, ক্ষমতায়নের মানে কী।’
সব শিশুর শিক্ষার অধিকারের স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তিতে যৌথভাবে নোবেল পাওয়া মালালা আরও বলেন, নারীশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা এ সময় তালেবানের জন্য আগের চেয়ে কঠিন হবে। এ নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী হবে না।
তালেবান ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় আফগানিস্তানে নারীশিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে গত বছরের আগস্টে আবারও ক্ষমতায় ফেরে তালেবান।
এদিকে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় দোহায় তালেবানের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘ছাত্রীদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফিরতে না দেওয়ার তালেবানের সিদ্ধান্তে গভীর হতাশা প্রকাশ করে লাখো আফগান পরিবারের প্রতি আমরা সংহতি জানিয়েছি।’
ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘দোহা ফোরামের সাইডলাইনে কাতারে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকসহ আমাদের কিছু দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আমরা বাতিল করেছি। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য এ সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার বিষয়টি আমরা স্পষ্ট করেছি।’ ‘শিগগিরই’ তালেবান তাদের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে বলে গতকাল মার্কিন বিশেষ দূত থমাস ওয়েস্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
পাকিস্তানি তালেবানের হত্যাচেষ্টা থেকে ১৫ বছর বয়সে বেঁচে যান মালাল ইউসুফজাই। তিনি বলেন, ‘তালেবানকে কূটনৈতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে নারীশিক্ষাকে শর্ত হিসেবে রাখা উচিত। তারা যদি নারীদের মানবাধিকারের স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে তাদেরও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত হবে না।’
গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতায় এলেও কোনো দেশ তালেবান সরকারকে এখনো পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি। এ ক্ষেত্রে তালবানের কাছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন এবং মানবাধিকার ও নারীশিক্ষার নিশ্চয়তা চেয়ে আসছে দেশগুলো।