নিউইয়র্ক টাইমসের খবর প্রত্যাখ্যান তালেবানের

নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের খবরটি গুজব

কাবুলের অভিসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করছেন ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা। ৬ সেপ্টেম্বর
রয়টার্সের ফাইল ছবি।

ইসলামি পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নারীদের আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না—নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবরকে গুজব বলে নাকচ করে দিয়েছে তালেবান সরকার। খবর জিয়ো টিভি।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী টেলিভিশন চ্যানেল জিয়ো নিউজকে দেওয়া বক্তব্যে আফগান সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নারী শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নেই।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আরও বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আগের মতোই পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন।

এর আগে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষার্থী ও অন্য নারী কর্মীদের উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে খবর প্রকাশ করা হয়।

নিউইয়র্ক টাইমস গত সোমবার বলেছে, ‘নারীদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ কঠোর করে তালেবান সরকারের নিয়োগ দেওয়া কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য সোমবার বলেছেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো।”’

উপাচার্য মোহাম্মদ আশরাফ ঘাইরাতের এক টুইটকে উদ্ধৃত করে ওই খবর প্রকাশ করা হয়। ঘাইরাত টুইটে বলেন, ‘যতক্ষণ না প্রকৃত ইসলামি পরিবেশ সবার জন্য প্রদান করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বা কাজ করতে দেওয়া হবে না। ইসলাম প্রথম।’

পশতু ভাষায় টুইট করে ঘাইরাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের শিক্ষাদানের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে, তা উল্লেখ করেননি তিনি। ঘাইরাত আরও বলেন, নারী প্রভাষকের স্বল্পতার কারণে পুরুষ প্রভাষকদের পর্দার পেছন থেকে ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এভাবে ছাত্রীদের শিক্ষার জন্য একটি ইসলামি পরিবেশ তৈরি হবে।

আর এ-সংক্রান্ত খবরে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন বলে, আফগান নারীদের জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করার সর্বশেষ পদক্ষেপ এটি।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের বরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে।

যাহোক, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, ভুয়া একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক টাইমস ওই খবর ছাপিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, মানুষকে ভুয়া খবর দিয়ে বিভ্রান্ত করতে এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। কোনো খবর প্রকাশ করতে হলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আশরাফ ঘাইরাতকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ইতিপূর্বে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। তাঁর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। টুইটারে এসব সমালোচনার জবাবে ঘাইরাত বলেন, নিজেকে সম্পূর্ণ যোগ্য বলেই দেখেন তিনি।

মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানের জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে ঘাইরাত বলেন, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য, বিশ্বব্যাপী প্রকৃত মুসলমানদের সমবেত করার পাশাপাশি গবেষণা ও পড়াশোনার স্থান তৈরি করা এবং আধুনিক বিজ্ঞানকে ইসলামিকীকরণ করা।