সামরিক মহড়া নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আর কোনো আলোচনা করবে না বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ উত্তর কোরিয়া এ নিয়ে আর কোনো শান্তি আলোচনা চায় না বলে জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে দেশটি।
আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজে প্রকাশিত বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার মুখপাত্র বলেন ‘দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার আর কোনো শব্দ নেই আমাদের।’ আর কোনো ধরনের আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকাণ্ডকে (সামরিক মহড়া) সম্পূর্ণভাবে দায়ী করা হয় বিবৃতিতে।
এর মধ্যে আজ ভোরে উত্তর কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলের উপকূলে পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী।
এক মাসের কম সময়ের মধ্যে এটা উত্তর কোরিয়ার ষষ্ঠ পরীক্ষা। ছয় দিন আগে দেশটি জাপান সাগরে স্বল্প দূরত্বের দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
গত জুন মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা আবারও শুরু করার ব্যাপারে সম্মত হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু হয়। পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নকাজের জন্য উত্তর কোরিয়াকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে।
জাপান থেকে স্বাধীনতা লাভের দিন উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল এক ভাষণে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন ২০৪৫ সালের মধ্যে কোরীয় উপদ্বীপকে এক করার অঙ্গীকার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়া দুটি দেশে ভাগ হয়ে যায়।
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার আলোচনা নিয়ে অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট মুন বলেন, ‘কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্য অর্জন এখন সবচেয়ে সংকটের মধ্যে রয়েছে। নতুন কোরীয় উপদ্বীপ নিজের, পূর্ব এশিয়া এবং বিশ্বের জন্য শান্তি এবং সমৃদ্ধি আনতে পারবে, যা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’
বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়া আলোচনার ‘অর্থ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এমনকি এই সময়েও, দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ অর্থনীতি বা শান্তিপূর্ণ শাসনের কথা বললে, তাদের এটা করার কোনো অধিকার নেই।’
প্রেসিডেন্ট মুনকে আক্রমণ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যখন তিনি (প্রেসিডেন্ট মুন) উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে আলোচনার কথা উল্লেখ করছেন, তখন আমাদের সেনাবাহিনীর বেশির ভাগকে ৯০ দিনের মধ্যে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করছেন। এ অবস্থায় তাঁর চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়াটি ঠিক কি না, তা নিয়েও আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। তিন সত্যিকার অর্থে একজন নির্লজ্জ ব্যক্তি।’
দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়া নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া। তারা এটাকে ‘যুদ্ধের মহড়া’ বলে মন্তব্য করেছে। সম্প্রতি ট্রাম্পকে লেখা এক চিঠিতে কিম জং–উন সামরিক মহড়াকে ‘অসম্ভব এবং ব্যয়বহুল’ বলে অভিযোগ করেছিলেন।