আফগানিস্তান

দেশজুড়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালাবে তালেবান

দেশটির প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি
 ফাইল ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানে তালেবান আবার ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে চরম অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট শুরু হয়েছে। দেশটির লাখো মানুষ খাবারের সংকটে ভুগছে। চলতি শীত মৌসুমে এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জনগণের জন্য ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি পরিচালনা করছে তালেবান সরকার। তালেবান জানিয়েছে, এই কর্মসূচি এখনই বন্ধ হবে না, বরং তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

আফগানিস্তানে গত আগস্টে তালেবানের ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই অনেক মানুষ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে তালেবানের আমলে দাতারা অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। এতে সংকটে পড়ে দেশটির অর্থনীতি। ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকট এড়াতে তালেবান সরকার বারবার দাতাদের অর্থ ছাড়ের আহ্বান জানায়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে আজ বুধবার বলা হয়েছে, এখন বিভিন্ন প্রকল্প ধীরে ধীরে অর্থছাড়ের জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। দাতাদের প্রতি জাতিসংঘ আফগানিস্তানের জন্য ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলারের অনুদান ছাড়ের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির মতে, সংকটের মুখে থাকা আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি মানুষের খাবার সংস্থানে এই অর্থ প্রয়োজন। তবে দাতাদের অনেকেই ভাবছে, মানবিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া অর্থ তালেবান প্রশাসন চালাতে ব্যয় করতে পারে।

খাবারের সংকট এড়াতে তালেবান সরকার হাজারো আফগানকে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির অংশ হিসেবে গম বিতরণ করছে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪০ হাজার কর্মীকে প্রতিদিন ১০ কেজি করে গম দেওয়া হচ্ছে। এসব গমের বেশির ভাগ ভারতের পক্ষ থেকে তালেবানের হাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারকে অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। তবে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এই উদ্যোগ জোরেশোরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি দেশজুড়ে চালুর চিন্তা করছে তালেবান সরকার।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে পাকিস্তানের কাছ থেকে অনুদানের ১৮ টন গম পেয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। দেশটি তালেবানকে আরও ৩৭ টন গম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারতের কাছ থেকে ৫৫ টনের বেশি গম পেতে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে তালেবান সরকার।

তবে এসব গমের কী পরিমাণ কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হবে, কী পরিমাণ মানবিক সহায়তা কাজে বিতরণ করা হবে, সেই বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও অর্থায়নবিষয়ক উপমন্ত্রী ফজল বারি ফজলি।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়েছে, চরম সংকটের মধ্য দিয়ে ২০২২ সাল শুরু করেছে আফগানিস্তানের মানুষ। দেশটির প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। শুধু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সংঘাত নয়, বর্তমানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার সম্মুখীন হয়েছে আফগানিস্তান। এটাও দেশটির মানবিক সংকট বাড়ানোর অন্যতম কারণ।