দেশকে বদলাতে চেয়েছিলেন শিনজো আবে

শিনজো আবে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল শক্তিশালী জাপান। এরপর থেকে শান্তিবাদী নীতি গ্রহণ করে তারা। সংবিধানও পরিবর্তন করে সেই মোতাবেক। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবে দেশকে সামরিক, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন। প্রতিবেশি চীনকে মোকাবিলায় সামরিক ব্যয় বাড়ানোর একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন।

২০২০ সালে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়েন শিনজো আবে। তখনো তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকায় ওই সিদ্ধান্ত বিশ্ববাসীকে প্রবল ধাক্কা দিয়েছিল। দেশকে যিনি সবচেয়ে বেশি দিন নেতৃত্ব দেন, সেই তিনিই প্রাণ হারালেন আততায়ীর গুলিতে। তাঁর রক্ত ঝরল রাজপথে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এ হত্যাকে ‘একেবারে ক্ষমার অযোগ্য’ বলে জানিয়েছেন।

সবচেয়ে তরুণ প্রধানমন্ত্রী

রয়টার্স জানায়, আইনপ্রেণতা হিসেবে সর্বপ্রথম ২০০৬ সালে প্রথমবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন আবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। সেবার মাত্র এক বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে তিনি আবার ক্ষমতায় ফেরেন দ্বিতীয় মেয়াদে। ভঙুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলে করা শান্তিবাদী সংবিধান পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয়তা পান তিনি। একইসঙ্গে ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ রক্ষার কথা বলেও মানুষের মন কাড়েন। ওই বছরের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আবের দল জয়ী হয়ার পর আবারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। দুই বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি ‘আবেনোমিক্স’ বা ‘আবেতত্ত্ব’ চালু করেন যাতে বলা হয় দেশটির অর্থনীতিকে আরও বেশি চাঙ্গা করবে। এরপর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

বিশ্বজুড়ে আবে বেশি পরিচিত ছিলেন তার নেওয়া তত্ত্ব ‘আবেনোমিক্সের’ জন্য। এর মাধ্যমে তিনি জাপানের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছিলেন।

কয়েক দশক ধরে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানোর সাহসী পদক্ষেপ নেন আবে। ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক শক্তি জোরদারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় কৌশলগত সামরিক জোট কোয়াড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জাপানের এই প্রধানমন্ত্রী।

আবের আমলেই জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম দেশের বাইরে যুদ্ধ করার এবং মিত্র কোনো দেশ আক্রমণের শিকার হলে তাদের সুরক্ষায় সেনা পাঠানোর বিষয়টি অনুমোদন করে।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম

রয়টার্স জানায়, ১৯৫৪ সালের সেপে্‌টম্বরে টোকিওতে জন্ম নেওয়া আবের পরিবার আগে থেকেই জাপানের রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী। তাঁর বাবা একসময় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নানা নবোসুকে কিশি ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর পরিবারের আরও একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

বাবার মৃত্যুর পর আবে ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো এলডিপির টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন। কয়েক দশক আগে পিয়ংইয়ংয়ের হাতে জাপানি নাগরিক অপহরণের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে শক্ত অবস্থান তাকে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।