গুহায় আটকা ফুটবল দল

থাই শিশুদের উদ্ধারে কোনো ঝুঁকি নেওয়া হবে না

গুহায় আটকে পড়া শিশুরা। ছবি: এএফপি
গুহায় আটকে পড়া শিশুরা। ছবি: এএফপি

থাইল্যান্ডে বন্যাকবলিত গুহায় আটকে পড়া ১২ শিশু ও তাদের কোচকে উদ্ধারে কোনো রকম ঝুঁকি নেবেন না উদ্ধারকারীরা। ঘটনার ১০ দিনের মাথায় তাদের জন্য খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেছে বলে থাইল্যান্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার গুহার মধ্যে ঢুকেছেন সাতজন ডুবুরি, একজন চিকিৎসক ও একজন নার্স। তাঁরা চিকিৎসাসামগ্রীর পাশাপাশি অনেক খাবারও নিয়ে গেছেন। তাঁরা ওই শিশুদের সঙ্গেই রয়েছেন। উদ্ধারকারীরা শিশুদের নিরাপদে বের করে আনার উপায় বিবেচনা করছেন।

চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাক্রন বলেছেন, ‘শিশুদের ওই গুহা থেকে বের করে আনার ক্ষেত্রে কোনো তাড়াহুড়া করছি না। যখন কোনো ঝুঁকি থাকবে না, তখনই তাদের সেখান থেকে বের করে আনার কথা ভাবা হবে।’

গতকাল থাই কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধারকারীরা শিশুদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেছেন এবং চিকিৎসা দিচ্ছেন। শিশুদের মনের জোর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আটকে পড়া শিশুদের কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।

থাই নেভির স্পেশাল ফোর্সের রিয়ার অ্যাডমিরাল অ্যাপাগ্রন ইয়োকনগেউ বলেন, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাদের সহজে হজম হয় এমন খাবার, অধিক শক্তিশালী খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ও খনিজ খাওয়ানো হচ্ছে।

আটকে পড়ার নয় দিন পর থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবল দলের ১৩ জনের জীবিত থাকার খবর স্বস্তির পাশাপাশি দুশ্চিন্তারও জন্ম দিয়েছে। কীভাবে তাদের উদ্ধার করা হবে, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা ও বিশ্লেষণ। কারণ, যে গুহায় তারা আটকা পড়েছে, সেটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। টানা ভারী বর্ষণ ও বন্যায় সেই ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে না এলে তাদের উদ্ধারে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়াইল্ড বোয়ার ফুটবল দলের ১২ কিশোর ও তাদের এক কোচ গত ২৩ জুন বেড়াতে গিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই এলাকার থাম লুয়াং গুহায় আটকা পড়ে। গুহাটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহার একটি। এখানে যাত্রাপথের দিক খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংযোগপথও (করিডর) বেশ সংকীর্ণ।

দেশটির সামরিক বাহিনী গতকাল জানায়, উদ্ধারপ্রক্রিয়াটি জটিল। থাইল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর দেওয়া বিবৃতির উল্লেখ করে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন আনন্দ সুরাবন বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে চার মাস চলার মতো খাবার পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। গুহার মধ্যে ঢুকে পড়া বন্যার পানি সরানোর চেষ্টার পাশাপাশি ১৩ জনকে ডুবসাঁতার শেখানো হবে।’

চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাক্রন গতকাল বলেন, ‘আমরা এটাকে বলছি অসম্ভব চেষ্টা। কারণ, প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। তবু আমরা আমাদের দৃঢ়সংকল্প ও যন্ত্রপাতি নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে লড়ে যাব।’

কিশোরদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তাদের কোচের বয়স ২৫ বছর। তাদের ডুবসাঁতার শেখানোর লক্ষ্য হচ্ছে তাদের গুহার বাইরে বের করে আনা। এই পদ্ধতি নিয়ে সংশয় আছে। বিশেষ করে এই কিশোরদের জন্য, যারা ডুবসাঁতার দিতে পারে না এবং নয় দিন না খেয়ে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কেভ রেসকিউ কমিশনের সমন্বয়কারী আনমার মির্জা বলেন, গুহায় ডুবসাঁতার দেওয়া চরম বিপজ্জনক।

তাদের উদ্ধারে খননপদ্ধতি ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আশঙ্কার বিষয় হলো ঠিক কোন স্থানটিতে খনন করা হবে। যেদিকে খনন করা হবে, সেখান থেকে আটকে পড়া ফুটবলারদের দূরত্ব কতটুকু বা সেখানে যাওয়ার পথ আছে কি না। আবার সবকিছু ঠিক থাকলেও দুর্বল শরীরে শিশুরা এতটা পথ বেয়ে ওপরে উঠতে পারবে কি না, সেটি নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে।

আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে সবচেয়ে নিরাপদ উপায় মনে করা হচ্ছে তারা যদি হেঁটে বের হয়। তবে বন্যার পানি গুহার অনেক স্থানে রয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে সেটি সম্ভব নয়। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পাম্প দিয়ে বন্যার পানি বের করার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনো ধরনের ধসের ঘটনা না ঘটে। কারণ, টানা ও ভারী বৃষ্টির কারণে সেখানকার মাটি এমনিতেই নরম হয়ে আছে। তবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে অনেক সময় লেগে যাবে বলে মনে করেন উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া বেলজিয়ামের ডুবুরি বেন রেমেনান্টস। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানিতে গুহার বিভিন্ন এলাকা ভরে গেলে সেসব পানি বের করতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।’

তবে গুহায় আটক খুদে ফুটবলারদের উদ্ধারে ঠিক কত দিন সময় লাগবে, এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। ডুবুরি রেমেনান্টস বলেন, ডুবসাঁতার দিয়ে বের হয়ে আসতে তাদের যেমন শরীরের জোর লাগবে, তেমনি গুহার ভেতরে দীর্ঘদিন থাকতে মনের জোর লাগবে। তবে আটকে পড়া কিশোর ও তাদের কোচ মানসিকভাবে বেশ ভালো আছে, এটা ভালো লক্ষণ।