জান্তার নিয়ন্ত্রণাধীন থাই সরকার যেকোনো উপায়ে যত দিন সম্ভব ক্ষমতায় থাকতে চায় বলে মনে করেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান। একই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
২০০৬ সালে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত হওয়ার পর থেকে দেশের বাইরে অনেকটা স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন থাকসিন। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, দেশে ফেরার ইচ্ছা আছে। দেশের ও জনগণের উপকার করতেই তিনি ফিরতে চান।
২০১৪ সালের মে মাসে থাকসিনের ছোট বোন ইংলাককে ক্ষমতাচ্যুত করেন থাই জেনারেলরা। জান্তাপ্রধান ২০১৭ সালে আবার নির্বাচন দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু দেশটির সংবিধানের পুনরায় খসড়া তৈরির কাজ এখনো চলছে।
থাকসিন বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে জান্তার প্রতিশ্রুতিতে তাঁর আস্থা নেই। এই সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুর্নীতি কমাতে সেনা সরকার নতুন সংবিধানের কথা বলছে। আসলে তা তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল।
থাইল্যান্ডে সেনা সরকার কত দিন টিকে থাকতে পারে—এমন প্রশ্নে থাকসিন বলেন, আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়।
থাইল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সাল থেকে তাঁদের দল প্রতিটি নির্বাচনে জিতেছে। নীতির কারণে তাঁরা জনগণের কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে,। তবে থাকসিনের সমালোচনায় মুখর দেশটির সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, আইনজ্ঞরা। তাঁরা থাকসিন ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন।
থাকসিন সিনাওয়াত্রা বলেন, জান্তা সরকার দেশের উন্নয়ন ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য কিছুই করেনি। তাঁরা সবার জন্য ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করেনি। বরং আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেছে। তিনি থাইল্যান্ডের জনগণের বাকস্বাধীনতা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে চান বলেও জানান।
থাকসিন বলেন, তিনি ক্ষমতায় বসতে চান না। ৬৭ বছর বয়সে এসে তাঁর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে চান।
ব্যক্তিগত জীবনে ভালো আছেন বলেও জানান থাকসিন। দুবাই, বেইজিং ও লন্ডনে ভ্রমণ করে তিনি খুব আনন্দ পেয়েছেন বলে জানান।
নিউইয়র্কে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে থাকসিন বলেন, তাঁর আশঙ্কা জান্তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যাহত করবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশিরা সে দেশে বিনিয়োগ করতে পারছে না।
১৯৩২ সালে রাজতন্ত্রের অবসান হওয়ার পর থেকে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। থাইল্যান্ডের ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি কে হতে পারেন, তা নিয়েও রয়েছে নানা মত। রাজা ভূমিবলের ছেলে যুবরাজ মহা ভাজরালংকর্নের নামও এসেছে এই তালিকায়। থাকসিন বলছেন, ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে তাঁর তেমন চিন্তা নেই। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডের আইন ও প্রচলিত প্রথা অনুসারে যেকেউ ক্ষমতায় আসতে পারেন।
বোন ইংলাককে নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন থাকসিন। ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেনা সরকারের অধীনে ইংলাকের বিচার চলছে। থাকসিনের আশঙ্কা, ইংলাকের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার হবে না।
থাকসিন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে জোরালো ভূমিকা পালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
থাইল্যান্ডে ক্ষমতার পালাবদল
২০০১
নির্বাচনে থাই রাক থাই পার্টির জয় ৷ জোট সরকার গঠন করেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা
২০০৫
নির্বাচনে জিতে থাকসিন দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী
২০০৬
রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাকসিনকে উৎখাত
২০০৭
থাকসিন ও মিত্রদের পিপল পাওয়ার পার্টির জয়
২০০৮
সেপ্টে.
আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী সমক সুন্দরাবেজ ক্ষমতাচ্যুত ৷ থাকসিনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সোমচাই ভোকসাওয়াত স্থলাভিষিক্ত
২০০৮
ডিসে.
আদালতের রায়ে সোমচাইয়ের দল বিলুপ্ত ৷ পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি ৷ সেনা-সমর্থিত জোটের প্রধানমন্ত্রী হন আপিসিত ভেজ্জাজিওয়া
২০১১
জুলাই
নির্বাচনে থাকসিন-মিত্রদের জয় ৷ থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী হন
২০১৪
মার্চ
আদালতের রায়ে ইংলাক ও নয়জন মন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত
২০১৪
মে ২২
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান প্রাইউথের ক্ষমতা দখল