শুরু হয়ে গেল নতুন একটা বছর। ‘টোয়েন্টি টোয়েন্টি’। ক্রিকেটের ভাষায় বললে ‘টি-টোয়েন্টি’।
নতুন বছরে বিশ্বরাজনীতি কেমন যাবে, বাঘা বাঘা নেতাদের ভূমিকা কী হবে, কে কেমন পারফর্ম করবেন, তা নিয়ে শুরুর দিনে একটা আগাম ধারণা করা যেতেই পারে।
২০১৯ সালের অভিজ্ঞতা ও ২০২০ সালের গতিপ্রকৃতির পূর্বাভাসের আলোকে বলা যায়, এ বছর বিশ্বের কোনো কোনো নেতাকে চাপে থাকতে হতে পারে। আর কেউ কেউ হাঁকাবেন ‘চার-ছক্কা’।
এই যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বছরটি নিঃসন্দেহে অগ্নিপরীক্ষার। ২০২০ সালের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ কে হবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে ট্রাম্প তো নিজেই নিজের বড় প্রতিপক্ষ। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন। এখন সিনেটে তাঁর বিচার হবে। সিনেট রিপাবলিকানদের দখলে। তাই ট্রাম্প নিশ্চিতভাবে বহাল তবিয়তে থাকবেন। তবে এই মেয়াদে নানা কাণ্ডকারখানা করে তিনি ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন কি না, তা দেখতে বছরের শেষ ভাগ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
ট্রাম্পের মতো সমস্যায় নেই তাঁর ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিজ দেশের রাজনীতি নিয়ে তাঁকে ভাবতে হয় না বললেই চলে। ‘তেড়ে মেরে ডান্ডা’ দিয়ে তিনি অনেক আগেই সব গন্ডগোল ঠান্ডা করে দিয়েছেন। দেশের রাজনীতির মাঠে তাঁর আশপাশে, সামনে-পেছনে বলার মতো প্রতিপক্ষ কেউ নেই। রাশিয়ায় এখন কার্যত একজনই নেতা। তিনি পুতিন। তাঁর বয়সটা বাড়ছে। কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা নেই। তরুণ পুতিনের চেয়ে বরং বয়স্ক পুতিনই বেশি ঝানু। পুতিনের রাজনীতির ক্ষেত্র এখন বিশ্ব। সেখানে তিনি দারুণ পারফরমার। অন্য সব বছরের মতো এবারও নিশ্চয়ই পুতিন বিশ্ববাসীকে তাঁর খেল দেখাবেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত বছরের মাঝামাঝি দায়িত্ব নিয়েই ফ্যাসাদে পড়েন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বরের আগপর্যন্ত তিনি খুব চাপে ছিলেন। সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল জেতে নাকি হারে, তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল তাঁর সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটায়। বিপুল বিজয় নিয়ে তিনি ক্ষমতায় ফেরেন। এখন তিনি দারুণ শক্তিশালী। ব্রেক্সিট কার্যকর করতে এখন তাঁকে আর ‘খাবি’ খেতে হবে না। তাই নতুন বছরে তাঁর ফুরফুরে মেজাজে থাকারই কথা। ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিটের প্রথম ধাপ কার্যকর করতে চান বরিস। সেটি তিনি করতে সক্ষম হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করতে গিয়ে তাঁকে বেগ পেতে হতে পারে। কারণ, ২০২০ সালের মধ্যে বাণিজ্যসহ অন্য বিষয়ের সুরাহা করা দুরূহ হবে।
গত বছর দ্বিতীয় দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে একের পর এক গেরুয়া ‘অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়ন শুরু করেন নরেন্দ্র মোদি। আসামে নাগরিকপঞ্জি করে বার্তা দেন, সারা দেশেই তা করা হবে। আগস্টে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা রদ করেন। কাশ্মীরকে করা হয় অবরুদ্ধ। ডিসেম্বরে পাস করেন বিতর্কিত নাগরিক সংশোধন আইন। এই আইন পাসের পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ভারত।
দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। বিক্ষোভ এখনো থামেনি। এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এ বছরও দেখতে হতে পারে মোদিকে। তাঁকে দিতে হতে পারে মূল্য। গত বছরের শেষ দিকে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খন্ডের নির্বাচনে মারাত্মক ধাক্কা খায় বিজেপি। চলতি বছর দিল্লি ও বিহারে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন নিয়ে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী মোদির চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। পুতিনের মতো তাঁকেও এখন আর দেশের রাজনীতি নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না। তাঁর ভাবনা, বিশ্ব পরিমণ্ডলে চীনের প্রতিপত্তি জোরদার করা নিয়ে। চলতি বছর তাঁকে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের পুরোনো রেষ টানতে হতে পারে। ট্রাম্পের সামনে নির্বাচন থাকায় তিনি বাণিজ্যযুদ্ধে কতটা মন দিতে পারবেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে সি চিন পিং বিশ্বে চীনের প্রভাব ও বলয় বাড়াতে আরও আগ্রাসী হবেন বলেই মনে হয়।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে বোঝা বড় মুশকিল। তিনি কখন কী করে বসেন, তার ঠিকঠিকানা নেই। তবে তিনি তাঁর সাময়িক ভালো মানুষির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন চলতি বছর। এর মধ্যে তার আভাস দিয়েছেন তিনি। গত বছরের শেষ দিকে তিনি তাঁর দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আগ্রাসী নীতি গ্রহণের ডাক দেন। কিম জং-উনের আগ্রাসী হওয়ার মানে খুব সহজ। উত্তর কোরিয়া হুটহাট পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। এই হুমকির ধারাবাহিকতায় ভিন্নভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছেন কিম জং–উন। নতুন বছরের শুরুর দিন তিনি সোজাসাপ্টা বলেছেন, পরমাণু ও আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর দেশ কোনো বাধ্যবাধ্যকতার মধ্যে নেই। শুধু তা–ই নয়, উত্তর কোরিয়া নতুন কৌশলগত অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোরও হুমকি দিয়েছে।