বকেয়া বিলের দাবিতে ছয় মাস বয়সী শিশু আলিফের লাশ আটকে রেখেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টাকার অঙ্কটা নেহাত কম নয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড় লাখ টাকা। একসঙ্গে এত টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য ছিল না দরিদ্র মা-বাবার। অসহায় পরিবারটিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের চালকেরা। দল বেঁধে হাসপাতালের সামনে ভিড় করে তাঁরা মর্গ থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্যাদাং শহরে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, হাসপাতালে শিশুর লাশ আটকে রাখার খবর পেয়ে মোটরসাইকেলের চালকেরা প্যাদাং শহরে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে মোটরসাইকেলের বহরটি হাসপাতাল থেকে বের হতে দেখা যায়। এক চালক এক হাতে ধরে রাখেন আলিফ পুতর নামে মৃত শিশুটির ছোট্ট শরীর।
ইন্দোনেশিয়ার এম জাজিল হাসপাতাল জানিয়েছিল, বকেয়া বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত আলিফকে তার পরিবার দাফন করতে পারবে না। তখনই ভাড়ায় খাটা মোটরসাইকেলের চালকেরা হাসপাতালে আসার সিদ্ধান্ত নেন। আলিফের চাচা ছিলেন তাঁদেরই একজন।
ওয়ার্দিয়ানসিয়াহ নামে এক মোটরসাইকেলচালক বিবিসি ইন্দোনেশিয়াকে বলেন, ‘অসহায় পরিবারটির কাছে প্রায় ২৫ মিলিয়ন রুপিয়া (দেড় লাখ টাকা) বিল দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের পক্ষে এই টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। আলিফের চাচার মাধ্যমে আমরা খবর পেলাম, টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পরিবারের কাছে শিশুর লাশ দেওয়া হচ্ছে না। তখনই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সংখ্যায় আমরা অনেক হওয়ায় তাঁরা হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।’
এ ঘটনার ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। যেসব সন্তানের মা-বাবা তাদের চিকিৎসার বিল পরিশোধ করতে পারবেন না, তাদের চিকিৎসা নিয়ে দেশটিতে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
অতীতে ইন্দোনেশিয়ার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে মেডিকেল বিল পরিশোধ না করা অবধি নবজাতক শিশুদের জিম্মি করে রাখার এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে।
প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর অধীনে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। তবে প্রকল্পটি তহবিলজনিত সমস্যায় ভুগছে। দরিদ্র অনেক পরিবার এতে নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
মৃত শিশুর মা দেবী সূর্য জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে নাম লিখিয়েছিল। নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থায় আলিফ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অপারেশন করা হলেও মঙ্গলবার সকালে সে মারা যায়। বকেয়া বিলের কারণে শিশুটির বাবা হাসপাতাল থেকে তার লাশ সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
দেবী সূর্য বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল যে পাওনা টাকাটা আমরা দিই। প্রশাসনিক কাজ সে জেরই টানছিল। খবর পেয়ে চালকেরা খেপে যান। তাঁরা জোর করে আলিফকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন।’
অশ্রুসজল মা বলেন, বেচারা আলিফকে মর্গে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে।
পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়েছে। এমন কাজ আর হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
হাসপাতালের পরিচালক ইউসিরওয়ান ইউসুফ বলেছেন, বকেয়া বিল এখন হাসপাতাল বোর্ডে পরিশোধ করছে। ঘটনাটিকে ভুল-বোঝাবুঝি বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরই আমরা পরিবারটির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমরা একটি সরকারি হাসপাতাল চালাচ্ছি। রোগীদের চিকিৎসার টাকা দেওয়ার সংগতি আছে কি না, তা আমরা কখনো জিজ্ঞেস করি না।’
তবে ইউসুফ বাইকচালকদের এই অভিযানের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের এই কাজকে তিনি বেপরোয়া ও বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন।
ইউসুফ বলেন, ‘আমাদের মাত্র একটি মানসম্পন্ন পরিচালনপদ্ধতি রয়েছে, তা ভেঙে পড়েছে। এটি মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। যদি রোগীর শরীরে কোনো ছোঁয়াচে রোগ হয়, তবে তার দায় কে নেবে?’
মোটরসাইকেলচালকদের এক প্রতিনিধি পরে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
চালক আলফিয়ানড্রি বলেন, ‘আমার সহকর্মীদের পক্ষ থেকে আমি এই ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা হাসপাতালের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা প্রক্রিয়াটি জানতাম না। খুব বেশি সময় লেগে যাচ্ছিল। এ কারণেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’