তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় আটজনকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে সৌদি আরব। পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। তবে এই আট ব্যক্তি কারা, তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সরকারি কৌঁসুলিরা বলেছেন, খাসোগির পরিবারের সদস্যরা অভিযুক্ত হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ জনের সাজা হবে ২০ বছর করে। এ ছাড়া বাকি তিন ব্যক্তিকে ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করতে হবে।
আজ সোমবার সৌদি প্রেস এজেন্সির বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি প্রসিকিউশন একে চূড়ান্ত রায় বলে উল্লেখ করেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আদালত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ও তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে খাসোগির পরিবারের সদস্যরা বলেছে, তাঁরা হত্যাকারীদের ক্ষমা করেছেন। সৌদি আইন অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের মুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। আজ সোমবার যাঁদের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে এর আগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সৌদি সরকারের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক খাসোগিকে গত বছরের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং সৌদি যুবরাজের মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে খাসোগি হত্যা মামলার এক রায়ের পর সরকারি কৌঁসুলি বলেছিলেন, এই মামলায় সৌদি রাজতন্ত্রের সাবেক উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানির বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও তিনি অভিযুক্ত হননি এবং পরে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক সৌদি সাংবাদিক খাসোগি গ্রেপ্তার-আতঙ্কে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। ব্যক্তিগত কাগজপত্রের প্রয়োজনে তিনি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। বলা হচ্ছে, সৌদি থেকে দুটি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর ওই স্কোয়াড দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে। তুরস্কের স্থানীয় দৈনিকগুলোতে ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। তাঁদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।
খাসোগিকে মারধরের শব্দ শোনা গেছে। রেকর্ডিং থেকে বোঝা গেছে, খাসোগিকে হত্যার পর কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছে। আরেকটি সূত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছে, খাসোগি এবং আরবি ভাষায় কথা বলা বেশ কয়েকজন মানুষের আওয়াজ পাওয়া গেছে। খাসোগিকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলছে, সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন বলে তাদের ধারণা। তবে সৌদি কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জামাল খাসোগি হত্যা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব ছিল তুরস্ক। দেশটি বরাবরই এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে আসছেন।