জাপানের চল্লিশোর্ধ্ব ছয় লক্ষাধিক নারী-পুরুষ সমাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বাড়িতে বসে থাকা এই লোকজন কোনো ধরনের সামাজিক যোগাযোগে অংশ নেয়নি। গতকাল শুক্রবার সরকারি এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
৩৯ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে সামাজিক বিচ্ছিন্নের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত অনুরূপ একটি সরকারি জরিপ অনুযায়ী তাদের সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে পাঁচ লাখ। জাপানে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে তাদের জন্য জাপানি ভাষায় একটি নামও ঠিক করা হয়েছে— ‘হিকিকোমোরি’। হিকিকোমোরি বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যে অন্তত ছয় মাস স্কুলে বা কাজে যায়নি এবং ওই সময়ে পরিবারের সদস্য বাদে অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
সরকারি জরিপ অনুযায়ী, ৪০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জাপানি নাগরিকের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ১৩ হাজার হিকিকোমোরি রয়েছে, যার তিন-চতুর্থাংশ পুরুষ। বার্তা সংস্থা এএফপিকে জরিপের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংখ্যাটি আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। হিকিকোমোরি কেবল অল্পবয়স্কদের সমস্যা না।’
সাম্প্রতিক সময়ের আগ পর্যন্ত মনে করা হতো, বয়স কুড়ির ঘরে থাকা কিশোর বা তরুণেরাই কেবল হিকিকোমোরিতে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক জাপানিদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ব্যাপী নিজেকে একটি গণ্ডিতে আটকে রাখার প্রবণতা ইদানীং বেড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া হিকিকোমোরিদের প্রায় অর্ধেক সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে নিভৃতে জীবনযাপন করছে বলে জানায় দেশটির সরকার। হিকিকোমোরিরা অধিকাংশই আর্থিকভাবে তাদের বৃদ্ধ মা–বাবার ওপর নির্ভরশীল।
হিকিকোমোরি শিশুদের বাবা-মাকে সহায়তা করছে—এমন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রিকা উয়েডা। তিনি বলেন, ‘জরিপের ফলাফল দেখে মোটেই অবাক হইনি। সরকারি উপাত্তের চেয়ে বরং আমাদের নিজস্ব জরিপের ফলাফলে আরও অনেক বেশি বয়স্ক হিকিকোমোরির খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে ষাটোর্ধ্ব হিকিকোমোরির কথা আমরা জানতাম না।’
রিকা উয়েডা বলেন, জাপানি সমাজে বসবাস করা দিন দিন কত কঠিন হয়ে পড়ছে, তারই প্রতিফলন এটি।
উয়েডা মেনে করেন, অতিরিক্ত কাজ জাপানি মানুষের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে।
রিকা উয়েডা বলেন, এখন নিজেদের কাছে সুখের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করার সময় এসেছে।