বাবারই ছেড়ে দেওয়া আসন। নিজে জিতেও ছিলেন এর আগে। তাই নিরাপদ বলেই মনে করা হতো আসনটি। সেই বাবাও যেনতেন ব্যক্তি নন। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, প্রণব মুখার্জি। তবে প্রণব–পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের জন্য এবার পথ মসৃণ নয়। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গিপুর আসন থেকে কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ। তিনি চতুর্মুখী লড়াইয়ে পড়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু মানুষের বাস মুর্শিদাবাদ জেলায়। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্মৃতিবাহী মুর্শিদাবাদ জেলায় আছে লোকসভার তিনটি আসন। মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর ও জঙ্গিপুর। এই তিনটি লোকসভা আসনের তিনটিতেই এবার প্রার্থী তালিকায় সংখ্যালঘু মুসলিম প্রার্থীদের গুরুত্ব দিয়েছে বিভিন্ন দল।
মুর্শিদাবাদ জেলা দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেস ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। ২০১১ সালে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় আসার পর শুরু করেন কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদের সাজানো বাগানকে এক এক করে ধ্বংস করা। তাতে অনেকটাই সফল হন মমতা। তবে মুছে দিতে পারেননি কংগ্রেসকে মুর্শিদাবাদের মানচিত্র থেকে। বহরমপুর ও জঙ্গিপুর আসনের বর্তমান সাংসদ কংগ্রেসের আর মুর্শিদাবাদ আসনের বর্তমান সাংসদ সিপিএমের। এবারও এই তিনটি আসন জেতার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে কংগ্রেস ।
ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদ আসনে বড় চারটি দল তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের শরিক দল সিপিএম তাদের প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে এই তিনটি আসনে। মুর্শিদাবাদের আসনে এবার চারদলই ঘোষণা করেছে সংখ্যালঘু মুসলিম প্রার্থীর নাম। জঙ্গিপুরেও কংগ্রেস বাদে বিজেপি, তৃণমূল এবং সিপিএম ঘোষণা দিয়েছে মুসলিম প্রার্থীর নাম।
জঙ্গিপুরে কংগ্রেসের অভিজিতের সঙ্গে লড়াইয়ের নেমেছেন বিজেপি প্রার্থী, সাবেক সিপিএম বিধায়ক মাহফুজা খাতুন। তৃণমূল দাঁড় করিয়েছে খলিলুর রহমানকে। তিনি একজন ব্যবসায়ী। অন্যদিকে বামফ্রন্ট দাঁড় করিয়েছে এক শিক্ষক জুলফিকার আলিকে।
পেশায় প্রকৌশলী অভিজিৎ ভারতের বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় নির্বাহী পদে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ২০১২ সালে বাবা প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়ায় তাঁর ছেড়ে আসা জঙ্গিপুরে সাংসদ হন অভিজিৎ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও জেতেন তিনি। গত নির্বাচনে অভিজিৎ পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৭৮ হাজার ২০১টি ভাট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের মোজাফফর হোসেন পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪০ ভোট। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শেখ নুরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ৪৫৫ ভোট। আর বিজেপির সম্রাট ঘোষ পেয়েছিলেন ৯৬ হাজার ৭৫১ ভোট। গতবারের ফলাফল বলে দিচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা জোরদার হবে। এর অন্যতম কারণ, সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাটিতে এবার সংখ্যালঘু প্রার্থীই দিয়েছে বিজেপি।
বিজেপির প্রার্থী মাহফুজা এর আগে সিপিএমের টিকিটে দুবার রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক হন। এরপর তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেও আর বিধায়ক হতে পারেননি। এবার তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়ে জঙ্গিপুর আসনের বিজেপির টিকিট পেলেন। তাই বলা চলে, এবারও এই জঙ্গিপুর আসনে লড়াই হবে চতুর্মুখী। অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে এবার তাঁর আসন টিকিয়ে রাখতে হলে লড়াই করতে হবে জোরদার করে। কারণ, এই আসনের বিজেপির সংখ্যালঘু প্রার্থী দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এক বিজেপির বেড়ে ওঠা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানো এবং সেই সঙ্গে হিন্দু ভোটকে তাঁর দিকে টেনে আনা। জঙ্গিপুর লোকসভা আসনের নির্বাচন ২৩ এপ্রিল।