বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে নজরুল মেলা হয়ে উঠেছে শিল্পী–কবিদের মিলনমেলা। গত রোববার (১১ জ্যৈষ্ঠ) থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার নজরুল স্মৃতিবিজড়িত চুরুলিয়া গ্রামে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী নজরুল মেলা। শেষ হবে আগামী ১ জুন। এ মেলা এবার ৪১ বর্ষে পা দিল।
প্রতিবছরই নজরুলের জন্মদিনকে ঘিরে চুরুলিয়া মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে। এই প্রত্যন্ত গ্রাম চুরুলিয়ায় জন্মেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
এবারও চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমি আয়োজন করে নজরুল মেলার। এই মেলায় যোগ দেন বাংলাদেশ, কলকাতাসহ দেশ–বিদেশের শিল্পীরা। তাঁরা স্মরণ করেন কবিকে। কবির স্মরণে তৈরি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল বিছিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই মেলাকে সামনে রেখে চুরুলিয়া সেজে ওঠে। গ্রামের বিভিন্ন দেয়ালে ভেসে ওঠে শিল্পীর তুলিতে কবিকে নিয়ে নানা ছবি, নানা লেখা, নানা আলপনা। ভেসে ওঠে কবির নানা বাণী, নানা কবিতা আর গানের পঙ্ক্তি।
এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রোববার প্রতিবারের মতো প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে শুরু হয় নজরুল মেলা। নজরুল জন্মোৎসব। সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত এই মেলা চলবে দিনভর। মেলায় আসেন গ্রাম–গাঁয়ের বহু শিল্পী। নজরুলগীতি, নজরুলনৃত্য, নজরুল–আবৃত্তি এবং নজরুল–নাটকে অংশ নেন শিল্পীরা।
বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন রাজ্যের মন্ত্রী নির্মল মাজি। উপস্থিত ছিলেন আসানসোলের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী, দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ কুমার অগাস্তি, চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও কবি নজরুলের ভাইয়ের ছেলে রেজাউল করিম আর বাংলাদেশের প্রথিতযশা নজরুলসংগীতশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা।
এদিন সংগীতে অংশ নেন মানসী মুখোপাধ্যায়, অরিত্র দাশগুপ্তসহ অন্যরা। সন্ধ্যায় আদিবাসী নৃত্যের তালে প্রদীপ জ্বালিয়ে সান্ধ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। এই অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা।
এদিন কলকাতার সংগীত সংস্থা কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড থেকে প্রকাশিত হয় শিশু–কিশোরদের জন্য রচিত কবি নজরুলের ৫১টি কবিতা-আবৃত্তির সিডি সংকলন ‘ছোটদের নজরুল’। এটি প্রকাশ করে কলকাতার ছায়ানট। এর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন কলকাতা ছায়ানটের সভাপতি শিল্পী সোমঋতা মল্লিক।
রাতব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন কলকাতার শিল্পী সোমঋতা মল্লিক, ছন্দা চক্রবর্তী, মাধবী মজুমদার, সোনালী গাঙ্গুলিসহ কলকাতার ছায়ানট, চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমি, সৃজনী আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্পী পরিবেশন করেন যন্ত্রসংগীত। নৃত্যানুষ্ঠান, নৃত্যগীতি, নাটকের আয়োজন ছিল।
এবার নজরুল পুরস্কার পান ড. তপন বাগচি। এ ছাড়া প্রমীলা পুরস্কার মমতা চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী পুরস্কার অসীম মিশ্র, অনিরুদ্ধ পুরস্কার নীলোৎপল বেরা এবং কাজী মোজাহার হোসেন স্মৃতি পুরস্কার পান দিলীপ কুমার অগাস্তি।