চীনে আটক দুই কানাডীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে চরবৃত্তির অভিযোগ আনা হচ্ছে। চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিয়ে কানাডা ও চীনের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা ও জালিয়াতির সন্দেহে গত ডিসেম্বর মাসে মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তার করে কানাডা। এর জবাবে চীন কানাডার নাগরিক সাবেক কূটনীতিক মাইকেল কভরিগ ও ব্যবসায়ী মাইকেল স্প্যাভোরকে হেফাজতে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে মেংকে গ্রেপ্তার করার কারণে তিনি কানাডার বিরুদ্ধে মামলা করছেন। মেংকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে চীন।
চীন ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দুই দেশের সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
গত শুক্রবার কানাডার পক্ষ থেকে মেংকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে বেশ কিছু আইনি ধাপের কারণে এতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
গতকাল সোমবার এ বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, চীনে আটক দুই ব্যক্তি ও চীনের অবস্থান নিয়ে কানাডা উদ্বেগে রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, চীন বিধিবহির্ভূত আটকের বিষয়টি সামনে আনছে। এই কানাডীয়দের পাশে দাঁড়ানো হবে। এর আগে ওই দুই ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান ট্রুডো।
চীনের হাতে আটক কভরিগ ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করছেন। চীনের কর্মকর্তাদের বরাতে দেশটির গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, কভরিগ চরবৃত্তি ও জাতীয় গোপন তথ্য চুরি করে বিদেশি এজেন্টদের কাছে পাচার করছিলেন। তিনি ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত ও বিজনেস ভিসা নিয়ে বারবার চীন ভ্রমণ করেছেন। স্প্যারোভ নানা রকম গোয়েন্দা তথ্য কভরিগকে পাচার করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা যোগাযোগে সাহায্য করেছেন।
চীনের নিরাপত্তার জন্য তাঁরা হুমকি বলে দাবি করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
আইসিজি বিবিসিকে জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের পক্ষ থেকে অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। ক্রাইসিস গ্রুপের হয়ে তিনি কাজ করেন এবং তাঁর কাজকর্ম স্বচ্ছ যেকেউ চাইলে দেখতে পারেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ঠিক নয়। এর আগে কভরিগ বলেছিলেন, তাঁর কাজ হচ্ছে বিভিন্ন কর্মকর্তা, একাডেমিক ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কনফারেন্সে যুক্ত থাকা।
স্প্যারোভ উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের কাছের শহর ড্যানডংয়ে বাস করতেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তিনি সেখানে ভ্রমণে নিয়ে যেতেন।
এদিকে মেং ওয়ানঝুকে কাল বুধবার আদালতে হাজির করা হবে। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যর্পণের বিষয়ে লিগ্যাল রিট অনুমোদন করবে কানাডা। এরপর তাঁকে প্রত্যর্পণের তারিখ নির্ধারণের জন্য শুনানি হবে।
দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাসকারী মেং ওয়ানঝু বর্তমানে জামিনে আছেন। তবে তাঁর কানাডা ছাড়ার অনুমতি নেই। তাঁর আপিল করার সুযোগ রয়েছে, যাতে তাঁকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি দীর্ঘায়িত হতে পারে।
শুক্রবার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সুপ্রিম কোর্টে কানাডার চার্টার অব রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমস ভাঙার অভিযোগে মামলা করেন মেং। তাঁকে বেআইনি ও ইচ্ছাকৃতভাবে আটক রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
বেইজিং বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা দ্বিপক্ষীয় বন্দী চুক্তির অপব্যবহার করছে। এ ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে। এ ছাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এটি।
বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে দর-কষাকষি চলছে।