সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ১০ লাখের বেশি মানুষকে চীন নিপীড়ন শিবিরে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মুসলিমদের গণ–আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের এশিয়া নীতির পরিচালক র্যান্ডেল শ্রিভারের এই মন্তব্যে বেইজিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘নিপীড়ন শিবির’ কথাটি আন্তর্জাতিক সমালোচনার ক্ষেত্রে সংবেদনশীল। কারিগরি শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে ইসলামি চরমপন্থীদের ঝুঁকি স্তিমিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী সচিব শ্রিভার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় জার্মানির নাৎসি বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শব্দ ‘নিপীড়ন শিবির’ কথাটি ব্যবহার করেছেন তিনি।
এর আগে বন্দিশিবিরের সাবেক বাসিন্দারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। শিবিরের প্রতিটি কক্ষে উপচে পড়া মানুষের ভিড়। প্রতিদিনকার পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি মগজ ধোলাইয়ের কারণে অনেকেই আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ হয়। কাঁটাতারের বেড়া আর পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে ঘেরা নিপীড়ন শিবিরগুলো বন্দীদের জন্য রীতিমতো বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীনের সেনাবাহিনীর ব্যাপারে পেন্টাগনে বিস্তারিত এক আলোচনায় শ্রিভার বলেন, ‘চায়নিজ সমাজতান্ত্রিক দলগুলো নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে চীনের মুসলমানদের গণহারে গ্রেপ্তার করে বন্দিশিবিরে আটকে রাখছে।’ তাঁর মতে, আটক মুসলিমের সংখ্যা ‘৩০ লাখের কাছাকাছি’ হবে।
ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মুসলমান নাগরিকদের প্রতি চীনের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার শিবিরগুলোকে পুনঃশিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। চায়নিজদের এহেন কর্মকাণ্ড ‘১৯৩০ সালের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে’ বলে দাবি করেন পম্পেও।
জিনজিয়াংয়ের জ্যেষ্ঠ চায়নিজ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন সরকার। মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সীমান্তবর্তী এ বিশাল এলাকায় ঠাঁই মিলেছে উইঘুরসহ অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু মুসলিমদের। মার্কিন যেকোনো অবরোধের বিরুদ্ধে ‘গুনে গুনে প্রতিশোধ’ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে চীন।
জিনজিয়াং কর্তৃপক্ষ গত মার্চ মাসে ‘নিপীড়ন শিবিরের’ সঙ্গে এলাকাটির তুলনা সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মতে, ‘এটি আর দশটি সাধারণ বোর্ডিং স্কুলের মতোই।’ তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, উইঘুর মা–বাবার ওপর সন্তানের উপাধি পরিবর্তনে বাধ্য করা থেকে শুরু করে তাদের ইসলামি শিক্ষার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জিনজিয়াং। শুধু নিষেধাজ্ঞাই নয়, তাদের আদেশ অনুযায়ী না চললে শাস্তিও পেতে হচ্ছে চীনা মুসলিমদের।