মালয়েশিয়ায় একটি বৌদ্ধ মন্দির বাঘের ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো হয়েছে
মালয়েশিয়ায় একটি বৌদ্ধ মন্দির বাঘের ভাস্কর্য দিয়ে

সাজানো হয়েছে

চীনা নববর্ষ–২০২২ কেন ‘বাঘবর্ষ’

চীন, পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে চীনা চান্দ্র নববর্ষ-২০২২ উদ্‌যাপন শুরু হয়েছে। আত্মীয়স্বজন মিলে ভোজে অংশ নেওয়া, কুচকাওয়াজ দেখা এবং নতুন বছরে সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন চলছে। দুই সপ্তাহ ধরে উৎসব চলবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছরও লাখো চীনা নাগরিক দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। তবে এরপরও দেশটিতে অনেক মানুষের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের পাশাপাশি বিশ্বের আরও অনেক দেশেই উদ্‌যাপিত হচ্ছে চান্দ্র নববর্ষ।

এ উৎসবে কী হয়ে থাকে

শীতকালীন অয়নের (২১ ডিসেম্বর) পর দ্বিতীয় নতুন চাঁদ ওঠার সঙ্গে চান্দ্র নববর্ষ উদ্‌যাপন শুরু হয়। ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেকোনো একটি তারিখে এ নববর্ষ হতে পারে। চান্দ্র নববর্ষের এ উৎসব বসন্তকালীন উৎসব নামেও পরিচিত। পারিবারিক ভোজ, ড্রাগনের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা এবং আতশবাজির ঝলকানি থাকে এ উৎসবে। মূল উদ্‌যাপন হয় বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের দিন।

চীনে পরিবারের সঙ্গে নববর্ষ উদ্‌যাপনের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো মানুষ জড়ো হন। এর জন্য কেউ কেউ হাজারো মাইলও পাড়ি দিয়ে থাকেন। সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে লাল রঙে সাজানো হয় বাড়িঘর। শিশুদেরও টাকা দেওয়া হয় উজ্জ্বল লাল রঙের খামে ভরে। চলতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ঠন উৎসবের মধ্য দিয়ে চান্দ্র নববর্ষ উদ্‌যাপন শেষ হবে। পূর্ণ চাঁদকে স্বাগত জানাতে লন্ঠন উৎসব করা হয়ে থাকে।

নব্বইয়ের দশক থেকে চীনের জনগণকে চান্দ্র নববর্ষের জন্য এক সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হয়। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চীনা জনগণ এ সময়ের মধ্যে ৮২০ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি অর্থ কেনাকাটা ও খাওয়াদাওয়ার পেছনে খরচ করেন।

এবারের চান্দ্র নববর্ষ কেন বাঘবর্ষ

প্রতিবছর চীনা রাশিচক্রের ১২টি পশু থেকে ১টির নামে নতুন বছরের নাম দেওয়া হয়ে থাকে। এ বছরে নাম দেওয়া হয়েছে বাঘবর্ষ। বলা হচ্ছে, নতুন বছরে যত শিশু জন্ম নেবে, তারা সাহসী, প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী হবে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় চীন ও হংকংয়ের প্রধান ভাষা ক্যান্টানিজ অনুযায়ী নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা হলো ‘গং হেই ফাতি চুওয়ে’। এর মানে হলো ‘আপনার সমৃদ্ধি কামনা করছি।’ মান্দারিন ভাষায় বলা হয় ‘সিন নিয়ান কুয়াই লে’। এর মানে হলো শুভ নববর্ষ।

চীনে নববর্ষ উদ্‌যাপনের উৎপত্তি কীভাবে

খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতকে চীনা নববর্ষ উদ্‌যাপনের ধারণাটি আসে। তখন শাসনক্ষমতায় ছিল শাং রাজবংশ। চান্দ্র নববর্ষের উৎপত্তি নিয়ে বেশ কয়েকটি মত প্রচলিত রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী বলা হয়, নিয়ান (বছর) নামের এক দানব প্রতিবছরের শুরুতে গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণ চালাত। অনেক হট্টগোল, উজ্জ্বল রঙের আলো এবং লাল রং ভয় পেত নিয়ান। আর মানুষ এগুলোকে ব্যবহার করে নিয়ানকে তাড়াত। তখন থেকে চীনে ড্রাগনকে শক্তি আর সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। নববর্ষ উদ্‌যাপনের সময় চীনের বিভিন্ন এলাকায় ড্রাগনের রঙিন মূর্তি তৈরি করে তা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় শোভাযাত্রা করা হয়। পুরোনো বছরের দুর্ভাগ্যগুলো মুছে ফেলতে নববর্ষে লোকজন তাঁদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেন।

এশিয়ার অন্য দেশগুলো কীভাবে উদ্‌যাপন করে

ভিয়েতনামে এ দিনটিকে ‘তেত নুয়েন দান’ কিংবা সংক্ষেপে ‘তেত’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। এর মানে হলো প্রথম সকালের উৎসব বা প্রথম দিনের উৎসব। মানুষ বাড়িঘর পরিষ্কার করেন এবং পিচ, কুমকোয়াতের মতো বিভিন্ন তাজা ফুল দিয়ে সেগুলো সাজান। পিচ ফুলের গোলাপি রং দিয়ে কর্মশক্তি আর কুমকোয়াত দিয়ে সমৃদ্ধি বোঝানো হয়।


উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া তিন দিন ধরে এ নববর্ষ উদ্‌যাপন করে। কোরীয় পরিবারগুলো শারি নামক একটি রীতি পালন করে থাকে। এর আওতায় নতুন বছরের জন্য পূর্বসূরিদের আশীর্বাদ নিতে তাঁদের খাবার দিয়ে থাকে তারা।

চীনের সাংহাইয়ের রাস্তায় বাঘের প্রতীকযুক্ত ছবি ও লন্ঠন হাতে হাঁটছে এক শিশু

দক্ষিণ কোরিয়ায় নববর্ষের জনপ্রিয় উপহারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে স্পাম (একধরনের খাবার)। টিনে সংরক্ষিত এ খাবারের গিফট হ্যাম্পারের জন্য ৭৫ ডলার পর্যন্ত খরচ করেন মানুষ।

মঙ্গোলিয়াতে এ উৎসবকে ‘সাগান সার ’নামে ডাকা হয়ে থাকে। মঙ্গোলিয়ার কেউ কেউ একে ‘দ্য হোয়াইট মুন ফেস্টিভ্যাল’ বা ‘সাদা চাঁদের উৎসব’ নামেও ডেকে থাকে।

বিশ্বজুড়ে কীভাবে চীনা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়

নিউইয়র্ক সিটিতে চীনা নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নববর্ষের শোভাযাত্রা করে থাকেন। নিউইয়র্কে আতশবাজির উৎসবও হয়। সারা ডি রুজভেল্ট পার্কে প্রায় ছয় লাখ আতশবাজির ঝলকানি দেখা যায়। এরপর চায়না টাউনের রাস্তায় রাস্তায় সিংহনাচ ও শোভাযাত্রা হয়।

সিঙ্গাপুরের রাস্তায় চিনগে নামের একটি শোভাযাত্রা হয়। রংবেরঙের পোশাক পরে বাঁশি নিয়ে হয় এই শোভাযাত্রা। থাকে সরাসরি পরিবেশনা ও আতশবাজি।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক চীনা জনগণের বসবাস। চীনা নববর্ষের সময় শহরটির রাস্তায় ৫৩ মিটার দীর্ঘ ড্রাগনের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়।