ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদে অবতরণের আগমুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পাকিস্তানের মন্ত্রী কটাক্ষ করেছিলেন। চন্দ্রযান-২–কে খেলনার সঙ্গে তুলনা করে পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছিলেন, চাঁদের বদলে মুম্বাইয়ে নেমেছে। ফাওয়াদ চৌধুরীর কটাক্ষের পর ভারতের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানালেন পাকিস্তানের প্রথম নারী মহাকাশচারী নামিরা সালিম।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযানের চেষ্টা প্রশংসা করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)। এরপরই চন্দ্রযান-২–এর কথা বলতে গিয়ে ইসরোকে শুভেচ্ছা জানান নামিরা সালিম। তিনি প্রশংসা করে বলেন, ইসরোর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ইসরোর এ অভিযান অনেক বড় ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপ। এর ফলে শুধু দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া নয়, পুরো বিশ্ব লাভবান হবে। ইসরো অনেকাংশে সফল হয়েছে। যদি ১০০ শতাংশ সফল হতে পারত, তবে উপকৃত হত সারা বিশ্ব।
একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘চন্দ্রযান-২’-এর সঙ্গে গত শুক্রবার রাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো)। বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি মহাকাশবিজ্ঞানীরা। চূড়ান্ত অবতরণের আগে ওই রোবোটিক গবেষণা যানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরে ইসরোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শেষ মুহূর্তে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে চাঁদের পৃষ্ঠে বিক্রম ল্যান্ডারের অবস্থান ইসরো খুঁজে পেয়েছে। ল্যান্ডারের থার্মাল ইমেজ সংগ্রহ করেছে অরবিটার। তবে এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এটি নামার কথা ছিল।
এরপরই মিশন চন্দ্রযান-২ নিয়ে একের পর এক টুইট করে ভারতকে কটাক্ষ করতে থাকেন পাকিস্তানের মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, ‘...যে কাজটা করতে পারো না, সেটা করারই দরকার নেই। প্রিয় এন্ডিয়া।’ ভারত ইন্ডিয়ার বানান যেভাবে লেখে, তার বদলে ‘এন্ডিয়া’ লিখেছেন পাকিস্তানের মন্ত্রী।
শেষ মুহূর্তে বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে ইসরোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও নাসাসহ অনেকেই ইসরোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। ইসরোর সঙ্গে একত্রে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশও করেছে নাসা। এরপর প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের মহাকাশচারীর প্রশংসা ভারতের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণই। কারণ, বর্তমান সময়ে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রথম নারী মহাকাশচারী নামিরা সালিম ২০০৮ সালে এভারেস্টে স্কাই ডাইভ করেছিলেন। মরক্কোয় থাকা নামিরা সালিম এভারেস্ট স্কাই ডাইভ করা প্রথম এশীয় নারী।
পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পরীক্ষামূলক উড্ডয়নকালে ভার্জিন গ্যালাকটিকের স্পেসশিপটু নামের একটি বেসরকারি মহাকাশযান আকাশে বিধ্বস্ত হয়েছিল। পরে এর ধ্বংসাবশেষ মোহাবি মরুভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। মহাকাশযানটিতে থাকা দুই বৈমানিকের একজন নিহত ও অপরজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এর উদ্যোক্তা ভার্জিনের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্রানসন। তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন নামিরা সালিম। গ্যালাকটিক স্পেসশিপটুর দুর্ঘটনা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের দীর্ঘদিনের লালিত মহাকাশ পর্যটনের স্বপ্নে বড় একটি আঘাত হিসেবে দেখা হয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া চন্দ্রজয় করেছে। তবে তা চাঁদের অন্য অঞ্চলে। ভারতের নভোযান চাঁদে অবতরণ করলে তারা চন্দ্রজয়ী চতুর্থ দেশ হিসেবে তালিকায় উঠে আসত। এটিই হতো চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া প্রথম নভোযান।
এ অভিযান পরিচালনা করতে ভারতের ব্যয় হয়েছে এক হাজার কোটি রুপি। এ অর্থ এর আগে পরিচালিত যেকোনো দেশের চন্দ্রাভিযানের খরচের তুলনায় বহুগুণ কম। ইসরো বলছে, একই ধরনের অভিযানে মার্কিন সংস্থা নাসার ২০ গুণ অর্থ খরচ হয়ে থাকে।
গত ২৩ জুলাই অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চন্দ্রযান-২। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় এক মিনিটের মধ্যে সেটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। তার এক সপ্তাহ আগে প্রথমবারের উৎক্ষেপণ বাতিল হয়। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস নাউ
আরও পড়ুন:
চাঁদের বদলে খেলনাটা নেমেছে মুম্বাইয়ে
চন্দ্রযান-২-এর প্রধান বিজ্ঞানীর জুতা কেনারও সামর্থ্য ছিল না