জাপানের নির্বাচন

ঘরে–বাইরে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফুমিও কিশিদা

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা
 ফাইল ছবি: রয়টার্স

সদ্য শেষ হওয়া সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়ে নিজের কিছুটা ভঙ্গুর অবস্থান শক্ত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এবার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পালা। করোনা–পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির গতি ফেরানো, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীনের প্রভাব মোকাবিলা, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করাসহ দেশে–বিদেশে নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দলের (এলডিপি) এই নেতাকে। খবর রয়টার্সের।

গতকাল রোববারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কার্যকর নীতি বাস্তবায়নের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে। এখন আমাদের দ্রুত এই দুটো বিষয় বাস্তবায়ন করতে হবে।’

অক্টোবরের প্রথম দিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন কিশিদা। সমালোচকদের মতে, করোনা মোকাবিলায় সফলতার পরিচয় দিতে না পারায় ওই সময় পদত্যাগ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। জনগণের ক্ষোভ সামাল দেওয়া ও সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ক্ষমতা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন কিশিদা। এ চ্যালেঞ্জে তিনি আপাতত সফল হয়েছেন।

আগামী গ্রীষ্মে জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনের আগে নিজের ও দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে কিশিদাকে। করোনার কারণে সংকটে থাকা অর্থনীতিকে চাঙা করতে বছর শেষের আগেই অতিরিক্ত বাজেট প্রণয়নের পথে হাঁটতে হবে তাঁকে। মহামারিতে ধুঁকতে থাকা পর্যটন খাতের ঘুরে দাঁড়াতে বড় আকারের প্রণোদনা অনুমোদন করানোর চ্যালেঞ্জ রয়েছে কিশিদার সামনে।

কিশিদার সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর চাপ সামলানো। সমুদ্রসীমায় চীনের সামরিক প্রভাব ঠেকাতে জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে এলডিপির। তবে করোনা–পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক সংকট এ ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।

এই বিষয়ে আজকের সংবাদ সম্মেলনে কিশিদা বলেন, ‘যখন মানুষের জীবন–জীবিকার নিরাপত্তার প্রশ্ন দেখা দেয়, তখন বাজেটের বিষয়টি সামনে আনা উচিত নয়। এ জন্য আমাদের যা করার দারকার, সেটাই করা হবে।’ আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষানীতি থেকে জাপানকে বের করে আনার পক্ষে কিশিদা। ৭৯ বছর বয়সী কিশিদা বলেছেন, তিনি চীনের সামরিক হুমকির বিষয়ে বেশি চিন্তিত।

জলবায়ুপরিবর্তন রোধে এশিয়াকে গ্রিনহাউস গ্যাসের ‘জিরো নির্গমন’ অঞ্চল হিসেবে দেখতে চান কিশিদা। এ জন্য তিনি দেশে–বিদেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে চান। জাপানকে এ বিষয়ে এশিয়ায় নেতৃত্বের আসনে বসাতে আগ্রহ রয়েছে কিশিদার। ২০৫০ সালের মধ্যে জাপানকে কার্বন–নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে গড়তে চান তিনি। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে (কপ–২৬) এ–সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে কিশিদাকে।

এবারের নির্বাচনে জাপানি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৪৬৫টি আসনের মধ্যে ফুমিও কিশিদার এলডিপি ২৯৩টি আসনে জয় পেয়েছে। যদিও এর আগের নির্বাচনে দলটির আসন ছিল ৩০৫। ফলে পার্লামেন্টে তাদের ক্ষমতা কিছুটা হলেও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জয়ের পরপরই কিশিদা এলডিপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আকিরা আমারিকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছেন বলে জোরালো গুঞ্জন উঠেছে।