বড় ভাই সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছিলেন হেলিকপ্টারে; আর ছোট ভাই বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালালেন বাসভবন ছেড়ে। তবে তিনি কীভাবে পালিয়েছেন, এর বর্ণনা এখনো মেলেনি কোনো গণমাধ্যমে। তবে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সুইমিং পুলে গোসল করে আনন্দে মেতে উঠেছেন বিক্ষোভকারীরা। আর তাঁদের গোসল ও আনন্দের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব ছবি ধরে প্রতিবেদন করেছে বিবিসি।
আন্দোলনের মুখে বড় ভাইয়ের মতোই গোতাবায়া রাজাপক্ষে সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। আজ শনিবার তাঁরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের মধ্যে ঢুকে গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নিজের সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালিয়ে যান গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
এনডিটিভির প্রতিবেদন বলছে, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনারা গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের মোকাবিলায় তাঁরা খোলা আকাশে গুলি ছোড়েন।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে মারাত্মক আর্থিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলে আর কিছু নেই। এ কারণে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কা খাবার, ওষুধ, জ্বালানির মতো অতি জরুরি আমদানি পণ্যের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।
বর্তমান এই দুরাবস্থার জন্য দেশটির অধিকাংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দায়ী করছেন। গত মার্চ থেকেই তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে রাজধানী কলম্বোসহ বিভিন্ন শহরে।
ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং জ্বালানির তীব্র সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সপ্তাহখানেক ধরে চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। দিনের পর দিন মানুষ জ্বালানি তেলের জন্য পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আজ শনিবার টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দিকে যাচ্ছেন। তাঁরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুড়ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। কিন্তু তাঁদের রোধ করা যায়নি। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়েন।
জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে দিশেহারা শ্রীলঙ্কার মানুষ। সংকট নিরসনে ব্যর্থতার অভিযোগে দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ–প্রতিবাদ। আর উত্তাল বিক্ষোভ ঠেকাতে দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজধানী কলম্বোয় গতকাল শুক্রবার জারি করা হয়েছে কারফিউ।
সরকারবিরোধী তুমুল বিক্ষোভে গতকাল উত্তাল ছিল কলম্বো। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ ও দ্রুত অর্থনৈতিক সংকটের লাগাম টানার দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। আজ শনিবারও বড় বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল। বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তাই যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আগে থেকেই কলম্বোয় কারফিউ জারি করে শ্রীলঙ্কা সরকার। আজ সেই কারফিউয়ের মধ্যেই বিক্ষোভের কারণে প্রেসিডেন্ট ভবন ছেড়ে চলে গেলেন।