শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। গোতাবায়ার মিত্ররা একে একে পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন। চাইছেন তাঁর পদত্যাগ। আজ মঙ্গলবার সরকারি জোট ছেড়েছেন কমপক্ষে ৪১ আইনপ্রণেতা। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গণবিক্ষোভের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে। খবর এএফপির
অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সংকটে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে ক্ষমতাসীন জোট সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল। একই সঙ্গে সেখানে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ ঘাটতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশটি আর এত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি। ক্ষুব্ধ শ্রীলঙ্কানরা চলমান সংকট নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভ থেকে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার একসময়ের প্রতাপশালী ক্ষমতাসীন জোট আইনপ্রণেতাদের একের পর এক পদত্যাগে অস্বস্তিতে পড়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক দিনের মাথায় নতুন অর্থমন্ত্রীও পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে আরও অস্বস্তি বেড়েছে প্রেসিডেন্টের।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় ক্ষোভে ফুঁসছেন মানুষ। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার বাড়িতে হামলা করছেন।
গোতাবায়ার জোট ছেড়ে আসা বর্তমান স্বতন্ত্র এক আইনপ্রণেতা বলেছেন, ‘এখন গোতাবায়ার পদত্যাগের সময় এবং ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবিলায় অন্যদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
উইজেয়াদাসা রাজাপক্ষে নামের ওই আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নিই, তাহলে দেশে রক্তের নদী বয়ে যাবে। আমাদের দলীয় রাজনীতি ভুলতে হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চিত করতে হবে।’
কয়েক ডজন এমপি রাজাপক্ষের সরকারের প্রতি তাঁদের সমর্থন প্রত্যাহার করার পর আজ মঙ্গলবার প্রথম পার্লামেন্টের অধিবেশন বসে। যাঁরা রাজাপক্ষের সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের শ্রীলঙ্কা পডুজানা পার্টি ও এর সাবেক জোট মিত্রদের ১৬ সদস্য রয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের ২২৫ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য গোতাবায়া সরকারের এখন পাঁচ আসন কম রয়েছে। এখন বিরোধী দল একজোট হয়ে গোতাবায়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে কি না, তা পরিষ্কার নয়।
তবে সরকারে এসে মন্ত্রিত্ব নেওয়ার জন্য সব দলের সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তিনি সর্বদলীয় সরকার গড়তে চেয়েছিলেন। তবে গোতাবায়া ও তাঁর ভাই প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বদলীয় সরকার গঠনের এ আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি বিরোধী দলগুলো।
এদিকে বিক্ষোভ দমাতে গত সপ্তাহে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল গোতাবায়ার সরকার। কিন্তু পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই আগামী সপ্তাহে এ অধ্যাদেশের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। জরুরি অবস্থা জারি নিয়ে বিরোধীদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে।
গোতাবায়া সরকার থেকে পদত্যাগ করা সাবেক মন্ত্রী নিমাল লানজা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের আর শাসন চালিয়ে যাওয়ার বৈধতা নেই। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে জনগণের দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে।
প্রেসিডেন্টের ভাই বাসিল রাজাপক্ষেকে সরিয়ে গত সোমবার সাবেক বিচারমন্ত্রী আলী সাবরিকে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু এক দিনের মাথায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। সাবরি বলেছেন, ‘সৃষ্ট অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আমি বিশ্বাস করি সর্বদা দেশের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করেছি। দেশের এই আর্থিক অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে আরও দক্ষ লোকের প্রয়োজন।’
ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা জ্বালানিসহ অন্য পণ্য আমদানির মূল্য শোধ করতে পারছে না, করোনাভাইরাস মহামারির সময় পর্যটন খাতের ধসকে আর্থিক এই দুর্দশার বড় কারণ বলা হলেও অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশের সংকট সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে নতুন করে সাহায্য চাইছে শ্রীলঙ্কা। সংস্থাটির সঙ্গে বৈঠকের আগেই নতুন অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগে বড় ধাক্কা খেয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
দেশটিতে সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষের বদলে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ হতে পারে। অথবা ২০২৫ সালে নির্ধারিত নির্বাচনের আগেই আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট কোন পথে হাঁটবেন, তা এখনো পরিষ্কার করেননি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টি সরকারি জোট ছাড়ায় রাজাপক্ষের সরকার সংখ্যালঘু সরকারে পরিণত হয়েছে। এতে সরকারের জন্য নীতিনির্ধারণ কঠিন হবে, যদিও স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতারা সরকারের প্রস্তাবে সমর্থন দিতে পারবেন। দলটির নেতা মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বলেছেন, ‘আমাদের দল জনগণের পক্ষে।’ তিনি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট পরিকল্পনা জানানোর আহ্বান জানান।