মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, দেশের জনগণকে রক্ষা ও গণতন্ত্র অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে সেনাবাহিনী। আজ শনিবার তিনি এ কথা বলেছেন। খবর রয়টার্সের।
এদিকে মিয়ানমারে গত মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। আজ ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে জান্তাবিরোধী চলমান বিক্ষোভে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাজধানী নেপিডোতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন মিন অং হ্লাইং। এ সময় তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে নির্বাচনের কোনো সম্ভাব্য তারিখ তিনি উল্লেখ করেননি।
মিন অং হ্লাইং বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনী পুরো জাতির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চায়। তাঁর এই বক্তব্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। জান্তা সরকারের প্রধান আরও বলেন, জনগণকে রক্ষা ও দেশে শান্তি আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘যেসব সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হয়, সেগুলো দাবিগুলোকে বেমানান করে তোলে।’
রয়টার্স জানায়, আজ খুব ভোরে ইয়াঙ্গুনের দালা এলাকায় জান্তিবিরোধী বিক্ষোভে নামেন লোকজন। এ সময় তাঁদের ওপর গুলি চালান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এতে অন্তত ৪ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তিন শতাধিক বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গুলিতে এবং তাঁদের এক-চতুর্থাংশের মাথায় গুলি করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক সতর্কবার্তায় বিক্ষোভকারীদের বলা হয়েছে, ‘আপনাদের এর আগের মৃত্যুগুলো থেকে শেখা উচিত যে আপনারা মাথায় ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো বিপদে পড়তে পারেন।’ অবশ্য এই সতর্কবার্তায় এটি উল্লেখ করা হয়নি যে বিক্ষোভ দমন করতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে গুলি করে হত্যার নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয়েছে কি না। তবে এর মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট যে শনিবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভকারীদের কোনো বাড়াবাড়ি সহ্য করবে না জান্তা সরকার।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় এনএলডির নেতা অং সান সু চিসহ তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের। সেই থেকে শহর-নগরগুলোতে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তবে দিন যত যাচ্ছে, ততই রাজপথে বাড়ছে লাশের সারি। গতকালও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন।