সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হত্যা করা হয়েছে। খাসোগিকে হত্যা বিষয়টি ছিল ভুল—সৌদি আরব এমনটা স্বীকার করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যমগুলো এমন খবর প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলেছে, সৌদি যে প্রতিবেদন তৈরি করছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, অপহরণের পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি মারা গেছেন।
দেশটির আরেকটি গণমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট–এর খবরে বলা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুর্বৃত্তরা খাসোগিকে হত্যা করেছেন।
তুরস্ক যখন এর আগে বলেছিল, খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। তখন এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছিল সৌদি আরব।
সাংবাদিক খাসোগি বিয়ের বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহের জন্য তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন ২ অক্টোবর। এরপর আর তাঁকে দেখা যায়নি।
সিএনএনের একটি সূত্র সতর্ক করে বলেছে, এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হচ্ছে। এটি পরিবর্তনও হতে পারে। তবে আরেকটি সূত্র বলেছে, এটা তৈরির কাজ মোটামুটি শেষ। ওই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের আটক করা হবে।
এদিকে নিউইয়র্ক টাইমস–এর খবরে বলা হয়েছে, সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ওই জিজ্ঞাসাবাদ ও অপহরণের অনুমোদন দেন। তবে সৌদি সরকার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, সালমান এই ঘটনার জন্য সৌদির এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে দায়ী করবেন।
এই সাংবাদিক নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরবের সঙ্গে পশ্চিমা মিত্রদের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে গত বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি আরবের বাদশা সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। বর্তমান অবস্থাকে ভয়ানক বলেও অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
তুরস্কের তল্লাশি শেষ
গত সোমবার সৌদি কনস্যুলেটে যে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছিল তুরস্কের পুলিশ, তা মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। আট ঘণ্টা ধরে এই তল্লাশি অভিযান চালায় তারা। ওই তল্লাশি শেষের পর তারা সেখান থেকে নমুনা হিসেবে কনস্যুলেটের বাগানের মাটিসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, ওই কনস্যুলেটের কর্মকর্তাদের বাড়িতে এবং আবারও কনস্যুলেটে তল্লাশি চালানো হতে পারে।
ওই তল্লাশি প্রসঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে ওই কনস্যুলেটের একটি অংশ নতুন করে পেইন্ট করা হয়েছে। তদন্তে বিভিন্ন বিষাক্ত দ্রব্যের সন্ধান পাওয়া গেছে কিন্তু নতুন এই পেইন্টিংয়ের কারণে সেগুলো মুছে যেতে শুরু করেছে।
নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি বন্দী, নির্যাতন ও ‘হত্যা’র ঘটনা নিজেই রেকর্ড করেছিলেন। ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার আগে তিনি নিজের অ্যাপল ওয়াচে রেকর্ডিং চালু করেন। পরে কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর তাকে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন ও সবশেষে ‘হত্যা’র ঘটনা সবই ওই অ্যাপল ওয়াচে রেকর্ড হয়। পরে সেগুলো তার ব্যবহৃত আইফোন ও তথ্য সংরক্ষণের অনলাইন স্টোরেজ ‘আইক্লাউডে’ জমা হয়।
সৌদি যুবরাজের মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক সৌদি সাংবাদিক খাসোগি গ্রেপ্তার আতঙ্কে এক বছর আগে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। ব্যক্তিগত কাগজপত্রের প্রয়োজনে ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেট ভবনে তিনি প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। বলা হচ্ছে, সৌদি থেকে দুটি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর ওই স্কোয়াড দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে। তুরস্কের স্থানীয় দৈনিকগুলোয় ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। এদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।
একটি সূত্র জানিয়েছে, খাসোগিকে মারধরের শব্দ শোনা গেছে। রেকর্ডিং থেকে বোঝা গেছে, খাসোগিকে হত্যার পর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। আরেকটি সূত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছে, খাসোগি এবং আরবি ভাষায় কথা বলা বেশ কয়েকজন মানুষের আওয়াজ পাওয়া গেছে। খাসোগিকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে।