মালয়েশিয়ায় আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমর্থন নিয়ে জয়ের প্রত্যাশা করছে বিরোধী দল। মালয়েশিয়ার সাবেক শক্তিশালী নেতা মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী পদে বিরোধী দলের হয়ে লড়াই করায় এই প্রত্যাশা আরও জোরালো হচ্ছে।
মাহাথির মোহাম্মদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁর একসময়ের শত্রু কারারুদ্ধ বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম।
নাজিবের আর্থিক কেলেঙ্কারি দিন দিন বেড়ে চলায় অবসরে চলে যাওয়া তাঁর একসময়ের গুরু মাহাথির মোহাম্মদ বিরোধী জোটে ভিড়েছেন। হাত মিলিয়েছেন পুরোনো শত্রু আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে।
মালয়েশিয়ার ৩ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মালয় জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশ, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। তাঁরা নির্বাচনে বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এই মালয়রাই নাজিবের জোট বারসিয়ান ন্যাশনালের (বিএন) সমর্থনের মূল ভিত্তি। বিএন দেশটির আদিবাসী চীনা ও আদিবাসী ভারতীয়দের চেয়ে মালয়দের বেশি সুবিধা দেওয়াসহ সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কিন্তু টানা ২২ বছর মালয়েশিয়া শাসন করা মাহাথির বিরোধী জোটে ভেড়ায় নাজিবের সমর্থনের ঘাঁটিতে বড়সড় একটা ধাক্কা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ওপর এমনিতেও ক্ষোভ জন্মেছে জনগণের।
ছোট শহর কাউলা পিলাহের আবদুল মোক্তার নামের (৭০) এক মালয় ব্যবসায়ী বলেন, ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল নাজিবের ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএসএনও) প্রতি দীর্ঘদিনের সমর্থন ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, গ্রামীণ মালয়রা আর্থিকসহ নানাভাবে ভোগান্তিতে আছেন। তাঁরা মাহাথিরকে ভোট দেবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কাউলা পিলাহ আসনের জন্য পার্লামেন্টের সদস্যপ্রার্থী ও ক্ষমতাসীন দলের সাবেক সদস্য এডিন সায়াজলি শিথ বলেন, নাজিবের অধীনে ইউএমএনও শুধু মালয়দেরই হতাশ করেনি, অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকেও হতাশ করেছে।
গত মাসে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, বিএন ৮ শতাংশ মালয় সমর্থন হারিয়েছে। কিন্তু মালয়দের সমর্থনে পরিবর্তন আসা সত্ত্বেও বিরোধী দল জয়ী হবে, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না অনেক বিশ্লেষকই। উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মালয়েশিয়ায় ইউএমএনও নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে কখনোই হারেনি। ইউনিভার্সিটি অব তাসমানিয়ার মালয়েশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেমস চিন বলেন, সমর্থন পরিবর্তন করা অনেক ক্ষেত্রই কঠিন ঠেকতে পারে অনেক মালয়ের কাছে।
গত সোমবার কুয়ালালামপুরের এক হাসপাতাল থেকে এক বিবৃতিতে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘পরিবর্তনের জন্য জনগণের আন্দোলনে শামিল হতে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি মাহাথিরকে ভোট দিতে জনগণের প্রতি এ সময় আহ্বান জানান। সম্প্রতি তাঁর কাধের অপারেশন হয়েছে। কারারুদ্ধ হলেও বিগত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালেই আছেন আনোয়ার।
এদিকে, সোমবার রাতে সরকারপন্থী টেলিভিশনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাজিব রাজাক। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ঘাঁটি এখনো শক্তিশালী ও অক্ষত। এ কারণে আমি আশাবাদী। কারণ আমাদের সেই সামর্থ্য আছে।’
স্বাধীনতা লাভের পর মালয়েশিয়ায় এটি ১৪ তম নির্বাচন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সব আসনে নির্বাচন হবে। নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা ২২২। যদিও দেশটির উচ্চকক্ষের ৭০টি আসনের সব নিয়োগপ্রাপ্ত, নির্বাচিত নয়।
পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে নাজিবের ক্ষমতাসীন জোট ১৩৩ আসন পেয়েছিল। বিরোধী দলটি আশা করছে, তারা বিএনের আসন কমাতে পারবে এবং অন্তত ১১২ আসন পাবে। আর তাহলে সরকার গঠন করতে পারবে বিরোধী দল।