কাগুজে ভাষায় সাংবাদিক জামাল খাসোগি এখনো নিখোঁজ। তাঁর বেঁচে থাকার আশা খুবই ক্ষীণ। তুরস্ক তো খাসোগি নিখোঁজের পর প্রাথমিক তদন্তে বলেই দিয়েছে, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তবে যে স্থানে তাঁকে হত্যার কথা বলা হচ্ছে, তা যে–কারও মনে ভীতি তৈরি করবে। এমন কড়া নিরাপত্তার জায়গায় হত্যা কোনো ক্ষমতাশীল ব্যক্তির পক্ষে ছাড়া সম্ভব নয়।
শুধু ক্ষমতাশীল হলেও সম্ভব নয়, যদি না রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও গোপনীয়তা থাকে। সে ক্ষেত্রে দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী যে ব্যক্তির নাম বলা হচ্ছে, এতে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও কয়েক গুণ হয়ে সামনে ধরা দেয়। অভিযোগের তির ছুটেছে সাংবাদিক খাসোগির দেশের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে। কিন্তু কী এমন লিখেছিলেন খাসোগি, যা খেপিয়ে তুলেছিল যুবরাজকে?
এটা সত্যি যে এই ক্ষমতাধর ব্যক্তির কড়া সমালোচক ছিলেন খাসোগি। যুবরাজ সালমানের শাসনে সৌদি আরবের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে খাসোগি একবার লিখেছিলেন, ‘যখন আমি ভয়, হুমকি, মনের কথা অকপটে বলার মতো দুঃসাহসী বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও প্রকাশ্যে অপমান করার বিষয়ে কথা বলি এবং ওই সময়ে যদি আমি আপনাকে জানাই যে আমি সৌদি আরবের মানুষ, তখন কি আপনি বিস্মিত হবেন?’ এই একটি বাক্যেই তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, সৌদিতে ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি কতটা দমন-নিপীড়ন চলে।
পেশাগত জীবনে খাসোগি রাজপরিবারের সুবিধা পেয়েছিলেন। রাজপরিবারের বদান্যতায় তিনি বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় পড়াশোনা শেষে তিনি সৌদি আরব ফিরে যান। অনেক প্রতিবেদককে পেছনে ফেলে তিনি বৈদেশিক সংঘাতের বিষয়ে প্রতিবেদনের সুযোগ পান। পেশাগত দক্ষতা দিয়ে আল–কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছিলেন তিনি। বিন লাদেনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে সরকারের কাছে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। সুদানে ১৯৯০ সালে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিন লাদেনকে বুঝিয়ে–শুনিয়ে সৌদিতে ফিরিয়ে আনা। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি।
তবে রাজপরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা খাসোগির ভাগ্যে শনি ভর করে গত বছর যুবরাজ মোহাম্মদ ক্ষমতা নেওয়ার পর।
২০১৭ সালের ২১ জুন মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করা হয়। সৌদি বাদশাহর পরই ক্রাউন প্রিন্সের অবস্থান। ২০১৫ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের উত্থান ঘটে।
সৌদি আরবে প্রথা ভেঙে একের পর এক সংস্কার আনছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, ধর্মীয় সহনশীলতা, নারীর প্রতি উদারতা, তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শন—এসব সংস্কার এনে পশ্চিমা বিশ্বের প্রশংসা কুড়ান তিনি। তবে একই সঙ্গে আঞ্চলিক রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা ইসরায়েলের সঙ্গে হঠাৎ মৈত্রী, শত্রুদেশগুলোর প্রতি আরও কঠোরতা প্রদর্শন এবং ভিন্নমত পোষণকারীদের কঠোরভাবে দমনের দুর্নাম রয়েছে তাঁর। বিশ্লেষকদের মতে, যুবরাজ মোহাম্মদের একের পর এক একক সিদ্ধান্ত স্বৈরতন্ত্র ও আঞ্চলিক যুদ্ধের পথ তৈরি করছে। ইয়েমেন যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করা হচ্ছে তাঁকে। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার জন্য তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ ভিন্নমত পোষণকারী সৌদির প্রথিতযশা সাংবাদিক জামাল খাসোগির নিখোঁজের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে তাঁর দিকেই।
তুরস্কের দাবি, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে জামাল খাসোগিকে।
সাংবাদিক খাসোগি গ্রেপ্তার–আতঙ্কে এক বছর আগে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। গত বছর থেকে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। ব্যক্তিগত কাগজপত্রের প্রয়োজনে ২ অক্টোবর সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকেন তিনি। সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। বলা হচ্ছে, সৌদি থেকে দুটি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর ওই স্কোয়াড দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে। তুরস্কের স্থানীয় দৈনিকগুলোয় ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। এঁদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, গত এক বছরে ওয়াশিংটন পোস্টে তাঁর লেখা ক্রাউন প্রিন্সকে ক্ষুব্ধ করেছিল। আসলে এমন কী লিখেছিলেন খাসোগি, যা পছন্দ করতে পারেননি যুবরাজ? ওয়াশিংটন পোস্টে তাঁর প্রকাশিত ১৪টি কলাম থেকে তুলে আনা হয়েছে কিছু চুম্বক অংশ।
‘সৌদি সব সময় দমনকারী ছিল না’
এই কলামের শুরুতে খাসোগি লিখেছেন, ‘যখন আমি ভয়, হুমকি, মনের কথা অকপটে বলার মতো দুঃসাহসী বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও প্রকাশ্যে অপমান করার বিষয়ে কথা বলি এবং ওই সময়ে যদি আমি আপনাকে জানাই যে আমি সৌদি আরবের মানুষ, তখন কি আপনি বিস্মিত হবেন?’
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর লেখা তাঁর কলামের শিরোনাম ছিল ‘সৌদি আরব সব সময় এমন দমনকারী ছিল না, এখন সেটা অসহনীয়’। এতে তিনি লেখেন, ‘তরুণ ক্রাউন প্রিন্স (পরবর্তী শাসক) মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় আসার পর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি আমাদের দেশটিকে আরও উদার, সহিষ্ণু করে গড়ে তুলবেন। দেশের অগ্রযাত্রাকে পেছনের থেকে টেনে ধরে এমন বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করবেন বলে জানিয়েছেন। যেমন নারীদের গাড়ি চালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা।
‘কিন্তু এখন আমি দেখতে পাচ্ছি, সেখানে একের পর এক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আমার ভালো বন্ধু। আমার দেশের নেতৃত্বের ব্যাপারে যাঁরা দ্বিমত প্রকাশের দুঃসাহস দেখিয়েছেন, সেই বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে প্রকাশ্যে অপমান করা হয়েছে।
‘কয়েক বছর আগে আমার কয়েকজন বন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি আমাকে খুব ব্যথিত করেছিল। ওই সময় আমি কিছু বলিনি। আমি আমার চাকরি ও স্বাধীনতা হারাতে চাইনি। পরিবার নিয়ে আমি দুশ্চিন্তা করতাম। এখন আমি ভিন্ন কিছু পছন্দ করতে পারি। আমি আমার বাড়ি, আমার পরিবার ও আমার চাকরি ছেড়ে এসেছি এবং আমি আমার কণ্ঠ তুলেছি। তা না হলে কারাগারে যাঁরা নিস্তেজ পড়ে রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়। আমি এখন কথা বলতে পারি, যা অনেকে পারেন না। আমি আপনাদের জানাতে চাই, সৌদি আরব এখন যেমন, তা সব সময় ছিল না। আমরা সৌদির মানুষ আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য।’
কলামে খাসোগি জানান, ২০০৩ সালে এবং ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার তিনি ‘প্রগতিশীল’ পত্রিকা আল ওয়াতেনের এডিটর ইন চিফ পদ থেকে বরখাস্ত হন। এর মধ্যবর্তী সময়ে তিনি ব্রিটেনে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত যুবরাজ তুর্কি আল-ফয়সালের মিডিয়া উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তাঁর ভাষায়, সরকার বরখাস্ত করার পর বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা হওয়া শুনতে বেশ অদ্ভুত লাগে। আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী মনে হলেও বিষয়টি সত্যবিবর্জিত নয়। সৌদি আরব এমনই ছিল। সেই অদম্য সময়ে, সৌদি আরব উদার সংস্কারপন্থী ও রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতা দুই পক্ষের চরম দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকার চেষ্টার করেছে। কিন্তু এরপরও কেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানো ও অর্থনীতিকে বহুমুখী করে তোলার লক্ষ্যে বহুল প্রত্যাশিত সংস্কারের পক্ষে থাকা অনন্যসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এক তরুণ নেতার সময়ের এই ভয় ও হুমকির পরিবেশ তৈরি হবে?
‘তিনি ভুল লোকদের সাজা দিচ্ছেন’
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ‘চরমপন্থীদের নির্মূল’ করতে চাইছেন, কিন্তু তিনি ভুল লোকদের সাজা দিচ্ছেন’—এই শিরোনামে জামাল খাসোগির কলাম ছাপা হয় গত বছরের ৩১ অক্টোবর। এতে তিনি লেখেন, যুবরাজ মোহাম্মদের চরম পন্থীদের পেছনে লাগা ঠিক আছে। কিন্তু তিনি ভুল লোকদের পেছনে লেগেছেন। ডজন ডজন সৌদি বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তারকাদের গত দুই মাসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই সর্বোচ্চ খারাপ হলেও সরকারের হালকা সমালোচক। অথচ জ্যেষ্ঠ উলেমাদের কাউন্সিলের অনেক সদস্যরা চরমপন্থী ধ্যানধারণা পোষণ করেন। যুবরাজ মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি শেখ সালেহ আল-ফাওজান সৌদি টিভিতে বলেছেন, শিয়ারা মুসলিম নয়। যুবরাজের আরেক ঘনিষ্ঠজন শেখ সালেহ আল-লোহাইদান আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন যে মুসলিম শাসকেরা অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য নন। তাঁদের এমন প্রতিক্রিয়াশীল মতামত গণতন্ত্র, নানা ধর্মমতের মানুষের অস্তিত্ব বা নারীদের গাড়ি চালনা অধিকার রক্ষায় রাজকীয় শাসকদের নির্দেশপরিপন্থী।
খাসোগি লেখেন, ‘এ ধরনের চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি সহ্য করা হলে আমরা কীভাবে আরও উদার হতে পারব? যাঁরা গঠনমূলক ফিডব্যাক দিচ্ছে এবং ভিন্নমত দিচ্ছে, তাঁদের নির্বাসিত করে কীভাবে আমরা জাতি হিসেবে এগোব?’
‘পুতিনের মতো আচরণ করছেন যুবরাজ’
গত বছরের ৫ নভেম্বর ‘সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স পুতিনের মতো আচরণ করছেন’ শিরোনামে খাসোগি লিখেছিলেন, অন্য দেশগুলোর দুর্নীতি থেকে সৌদি আরবের দুর্নীতি সম্পূর্ণ আলাদা। ‘ঘুষ’ বিষয়টি সেখানে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় যে চুক্তির বিপরীতে কাজ আদায়, সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য বা যুবরাজের জন্য দামি উপহার দেওয়া বা ব্যক্তিগত বিমান দেওয়া, যাতে করে সরকারি কর্মকর্তারা পরিবার নিয়ে অবকাশে যেতে পারেন।
এর পরিবর্তে বড়সড় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও যুবরাজেরা বিলিয়নিয়ার হয়ে ওঠেন। ২০০৪ সালে নিউইয়র্কারে লরেন্স রাইট ‘নিশ্চুপ রাজ্য’ শিরোনামে লিখেছিলেন, জেদ্দায় বড় ধরনের পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় শহরজুড়ে ম্যানহোল বসানো হয়, অথচ এর নিচে কোনো পাইপ ছিল না। তিনি লেখেন, ‘আমি ওই সময় বড় একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলাম। আমরা সব জানতাম, কিন্তু কেউ কখনো এ নিয়ে প্রতিবেদন লিখিনি।’
আরেকটি উদাহরণ তুলে ধরে খাসোগি জানান, শুধু কয়েকজন যুবরাজকে সুবিধা দিতে ভুল জায়গায় বিমানবন্দর স্থাপন করা হয়েছিল। ওই জমির মালিক ছিলেন তাঁরা। সরকারের কাছ থেকে তাঁরা ওই জমি বিনা মূল্যে পেয়েছিলেন অথচ বিমানবন্দরের জন্য, সেই জমির জন্য তাঁদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।
যুবরাজকেও দুর্নীতির দায় নিতে হবে উল্লেখ করে খাসোগি লেখেন, ‘যুবরাজ মোহাম্মদ ২০১৫ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ইয়ট কিনেছিলেন। তাঁর অমিতব্যয়িতার গুজব রয়েছে দেশজুড়ে। অর্থ এখন তাঁর দরজায় এসে থামে। পরিবারের অন্য সদস্যদের এবং দেশের মানুষদের জন্য তিনি নিজে যে মান ঠিক করেছেন, তিনি তো তার ঊর্ধ্বে নন। তিনি কি পুরো পদ্ধতির সত্যিকার সংস্কার আনার পথে রয়েছেন?’
‘সৌদি আরব লেবাননে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে’
এই শিরোনামে গত বছরের ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত কলামে খাসোগি লেখেন, এ অঞ্চলে এখন সৌদি আরব একাই রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিকভাবে নিরাপদ দেশ। এমবিএসের (প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নামের আদ্যক্ষর নিয়ে সংক্ষেপে তাঁকে এমবিএস বলা হয়) অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে এবং গালফ দেশগুলোর নিরাপত্তাকে তুচ্ছ করে ফেলছে।
সৌদি আরবের রিয়াদে গিয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির রহস্যজনক পদত্যাগের ঘোষণার (পরে যা প্রত্যাহার করা হয়) কথা তুলে ধরে খাসোগি লেখেন, সৌদি আরব লেবাননে তাদের মিত্র সুন্নিদের সঙ্গে নিয়ে এখন নিজের জন্য নিজেই সমস্যা তৈরি করছে। লেবাননের সুন্নিদের মধ্যেও ভাগ আছে, তাদের অনেকে রিয়াদের সঙ্গে বন্ধুভাবাপন্ন নয়। হারিরিকে দেশে ফেরানোর দাবি যারা জানাচ্ছে, তারাও সুন্নি। হারিরি না ফিরলে লেবাননে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা অসম্ভব। এটা নতুন ধরনের এক দুর্দশা, যা যুবরাজ তৈরি করেছেন এবং এটার এখন সমাধান প্রয়োজন।
‘আরব বসন্তের সঙ্গে প্রতারণার মূল্য চুকাচ্ছে সৌদি’
ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন খাসোগি। ইয়েমেন সরকারের পক্ষে ইরান–সমর্থিত বিদ্রোহী হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। হুতি বাহিনীর হাতে ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট সৌদির অনুগত আলী আবদুল্লাহ সালেহের মৃত্যুর পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ‘আলী আবদুল্লাহ সালেহর মৃত্যু, আরব বসন্তের সঙ্গে প্রতারণার মূল্য চুকাচ্ছে সৌদি আরব’ শিরোনামের কলামে তিনি লেখেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সালেহর মৃত্যু ইয়েমেনে রিয়াদের নীতি পুনরায় খুঁটিনাটি পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার সংকেত দিচ্ছে। এই সংকেত হয়তো সৌদি বুঝতে পারছে না। হুতিদের পরাজয়ের মাধ্যমে বিপর্যস্ত করা ও রাজনৈতিক খেলা থেকে বের করে দেওয়ার জন্য রিয়াদের কেউ কেউ আরও যুদ্ধে জড়াতে প্রলুব্ধ হচ্ছে, কিন্তু এটার জন্য অনেক মূল্য দিতে হবে। শুধু সৌদি নয়, ইয়েমেনের জনগণ ইতিমধ্যে প্রচণ্ড ভুক্তভোগী। এই সংঘাত হচ্ছে প্রত্যাশিত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ইয়েমেনের মানুষকে বাধা দেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি। হুতি এখন উল্লেখযোগ্য একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আরব বসন্তভিত্তিক ক্ষমতা ভাগাভাগির মূল্যবোধ তাদের নেই। বিশ্ব ইয়েমেনের যুদ্ধ দেখছে। সৌদির শুধু এই যুদ্ধ বন্ধ করা নয়, হুতিদের প্রতি ইরানের সমর্থন বন্ধেও চাপ দেওয়া উচিত।
‘ইরান নিয়ে যুবরাজের মাথাব্যথা কেন’
এ অঞ্চলে ইরানকে সবচেয়ে বেশি হুমকি বলে মনে করে সৌদি আরব। ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক, লেবাননে ইরান–সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরুদ্ধে দেশটিতে বিক্ষোভ ফুঁসে উঠলে তা থেকে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করে সৌদি আরব। এ নিয়ে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি প্রকাশিত খাসোগির কলামে উঠে আসে বিষয়টি।
লেখায় ইরান নিয়ে ক্রাউন প্রিন্সের মাথাব্যথার বিষয়টিও খাসোগি উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘ইরানের সঙ্গে সংঘাত সৌদি আরবে জনপ্রিয় ইস্যু। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের ভীতিকর বিস্তৃতির ব্যাপারে নজরদারিতে সোচ্চার সৌদির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং এটা কলাম লেখক ও পণ্ডিতদের কথাতেও প্রতিধ্বনি হয়। নিশ্চিতভাবে এই সতর্ক সংকেত বাজানোর যথেষ্ট কারণ আছে রিয়াদের। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে ব্যর্থ নীতির কারণে সেখানে শিয়া সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটেছে, এর পরিধি ভূমধ্যসাগর থেকে তেহরান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, দৈর্ঘ্যে যা টেক্সাস-মেক্সিকো সীমান্তের প্রায় সমান। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে সৌদি আরবের শক্তিশালী ব্যক্তি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (যিনি এমবিএস বলে পরিচিত) সৌদি সাংবাদিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন, সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। তিনি শিয়াদের উত্থানের ভয়াবহ দিক তুলে ধরেন। তিনি সুদান, পাকিস্তান ও দিজিবাউতিতে ইরানের প্রভাব সম্পর্কেও সতর্ক করেন।’
‘দেশের গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন যুবরাজ’
এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ‘সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ইতিমধ্যে জাতির গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, এখন তিনি আরও পিষে চলেছেন’ শিরোনামের কলামে খাসোগি লেখেন, রিয়াদের রিটজ-কার্লটন হোটেলে দুর্নীতির অভিযোগে যখন রাজপরিবারের তিন শতাধিক সদস্য, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সম্পদশালী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সৌদির বেশ কয়েকজন মিডিয়া টাইকুনকে আটক রাখা হয়েছিল, তখন দেশের অনেক মানুষ ভেবেছিলেন, শক্তিশালী মানুষ ক্রাউন প্রিন্সের মিডিয়া নিয়ন্ত্রণেরও লক্ষ্য রয়েছে। এটা সত্যি থেকে অনেক দূরে, কারণ তিনি আগেই তা করেছেন। তিনি লেখেন, আরব বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী টিভি নেটওয়ার্ক মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টারের (এমবিসি) চেয়ারম্যান ওয়ালিদ আল-ইব্রাহিমকে অন্যদের সঙ্গে গত নভেম্বরে আটক করা হয়েছে। তিনি সরকারের সঙ্গে গোপন এক চুক্তিতে আসার পর মুক্ত হন। সৌদি গণমাধ্যমে এসেছে, প্রতিষ্ঠানে তিনি এখনো পরিচালক পদে আছেন, তবে সরকারের বিনিয়োগ তহবিল এমবিসিকে এখন নিয়ন্ত্রণ করছে। এমন আটক কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব গোপন চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
খাসোগি লেখেন, ‘১৮ মাস ধরে যাঁরা দ্বিমত পোষণ করছেন, তাঁদের ক্রাউন প্রিন্সের যোগাযোগ দল প্রকাশ্যে তিরস্কার করছে, হুমকি দিচ্ছে। ওই দলের প্রধান সৌদ আল-কাহতানির একটি কালো তালিকা আছে, তিনি অন্যদের ডেকে সেখানে নাম যুক্ত করতে বলেন। আমার মতো লেখকেরা, যাঁরা শ্রদ্ধার সঙ্গে সমালোচনা করেন, তাঁদের লন্ডনভিত্তিক কট্টর সৌদিবিরোধীদের চেয়েও বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অভিযোগ জানানো সাংবাদিকদের অর্থ দিয়ে ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে প্রবেশাধিকার দিয়ে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। দেশের রেডিও–টেলিভিশনে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান ও ডিজিটাল কনটেন্টের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে যুবরাজ মোহাম্মদের।’
‘রানির কাছ থেকে যুবরাজের শেখা উচিত’
এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রবার্ট ল্যাসের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা খাসোগির কলামটির শিরোনাম ছিল ‘রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের যা শেখা উচিত’। এতে তিনি লেখেন, হাউস অব উইন্ডসরের কাছ থেকে হাউস অব সৌদের বড় শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মানুষের কথা শোনা। বেশ কয়েকটি ঘটনায় বিশেষ করে ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর জনগণের সমালোচনার প্রতি মাথা নুইয়ে রানি তাঁর মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছেন। তিনি গর্বিত যে তিনি এমন একটি সমাজের নেতৃত্ব দেন, যেখানে মুক্তভাবে চিন্তা করা যায় এবং কথা বলা যায়। একই কথা সৌদির ক্ষেত্রে বলা যায় না।
খাসোগি লেখেন, ১১ জন যুবরাজকে গ্রেপ্তার করা সুখবর হতে পারে—আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজপরিবারের কাউকে সাধারণ মানুষের মতো দেখা হয়েছে। কিন্তু কয়েক ডজন বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় পণ্ডিত ও সাংবাদিকের সঙ্গে কী হচ্ছে, তাঁদের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগও কম, গত সেপ্টেম্বর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বিচারের জন্য বন্দী রাখা হয়েছে। তাঁরা কখনো গভর্নর প্রাসাদের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেননি, বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে কণ্ঠ তোলেননি এবং পুলিশকে বাধা দেননি। তাঁদের প্রতিবাদের একমাত্র রূপ ছিল তাঁদের চিন্তাভাবনা।
যুবরাজকে পুরোনো শহর নিয়ে ভাবার আহ্বান
এ বছরের ২০ মার্চ রবার্ট ল্যাসের সঙ্গে আরেকটি যৌথ লেখায় খাসোগি যুবরাজ মোহাম্মদকে নতুন শহর গড়ে তোলার আগে পুরোনোগুলো নিয়ে ভাবার আহ্বান জানান। ওই কলামের শিরোনাম ছিল ‘কেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের ডেট্রয়েট (মার্কিন শহর) সফর করা উচিত’।
‘যুবরাজ সংশোধনবাদের ইতিহাস ফেরি করছেন’
‘সৌদি সমস্যার জন্য ১৯৭৯ কে দোষারোপ, ক্রাউন প্রিন্স সংশোধনবাদের ইতিহাস ফেরি করছেন’—এই শিরোনামে খাসোগি কলাম লেখেন এ বছরের ৩ এপ্রিল। তিনি লেখেন, এই মুহূর্তে সৌদি আরবে কেউ কথা বলারও সাহস পায় না। যারা উঁচু গলায় কথা বলার মতো সাহস দেখায়, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। উদারপন্থী যাঁদের কাজ একসময় কট্টরপন্থী ওয়াহাবিরা সেন্সর বা নিষিদ্ধ করেছিল, তারা এখন টেবিল ঘুরিয়েছে। যেসব বিষয় তারা কট্টর বলে মনে করছে, তা নিষিদ্ধ করছে। যেমন গত মাসে রিয়াদে আন্তর্জাতিক বইমেলায় বিভিন্ন ধরনের বই সেন্সর করা হয়েছে। এমন উল্টো ঘুরে যাওয়ার ঘটনায় কেউ আনন্দিত হতে পারেন, কিন্তু আমাদের কি চিন্তাভাবনার উন্মুক্ত বাজার অনুমোদন করার প্রত্যাশা থাকা উচিত নয়?
‘সৌদিরা “ব্ল্যাক প্যান্থার” থেকে কী শিক্ষা নিতে পারে’
সৌদি আরবে ৩৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে এ বছরের এপ্রিলে এএমসি থিয়েটারে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয় ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ছবিটি। তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর এটাই সৌদিতে প্রদর্শিত প্রথম কোনো সিনেমা নয়। সৌদি সরকারের আয়োজনে জেদ্দায় অস্থায়ী এক থিয়েটারে শিশুদের জন্য কয়েকটি সিনেমা প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয় মার্কিন কম্পিউটার অ্যানিমেটেড সিনেমা ‘দা ইমোজি মুভি’।
এ বছরের ১৭ এপ্রিল ‘সৌদিরা “ব্ল্যাক প্যান্থার” থেকে কী শিক্ষা নিতে পারে’ শিরোনামের কলামে খাসোগি লেখেন, দশকের পর দশক ধরে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সৌদি আরবে এডিজনির ব্লকব্লাস্টার সিনেমা ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ প্রদর্শিত হয়েছে। সৌদিদের জন্য এটা অনেক বড় পদক্ষেপ। দীর্ঘ সময় ধরে, কট্টরপন্থী ধর্মীয় ব্যক্তিরা প্রচার করেছেন, সিনেমা নৈতিক মূল্যবোধের ধ্বংস ডেকে আনে। যুবরাজ এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি প্রচারকদের এমন মূর্খতা প্রচারের বিষয়টিও কার্যকরভাবে বন্ধ করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, কী অনুমতি দেওয়া যাবে, কী যাবে না, সে ব্যাপারে সরকারের কথাই শেষ কথা। সেভাবে কিছু বিষয় নাগরিকদের ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত, ধর্মপ্রচারকদের ওপর নয়।
পৃথিবীর ভালোর জন্য যুবরাজকে কিছু করার আহ্বান জানিয়ে খাসোগি লেখেন, ‘সিনেমাটির শেষে ওয়াকান্দার তরুণ রাজা পৃথিবীর কল্যাণের জন্য নিজের দেশের ক্ষমতাকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। যুবরাজ মোহাম্মদ, যিনি সৌদির পরবর্তী বাদশাহ হতে যাচ্ছেন, তিনি কি পৃথিবীতে শান্তি আনতে তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করবেন?’
‘সৌদি আরবের সংস্কারকদের সামনে এখন ভয়াবহ পথ’
এই শিরোনামে খাসোগি কলাম লেখেন এ বছরের ২১ মে। ওই কলামে সৌদির খ্যাতনামা নারী অধিকারকর্মী, যিনি সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন, সেই লাউজাইন আল-হাথলোউলসহ কয়েকজন নারী অধিকারকর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনায় যুবরাজ মোহাম্মদের কড়া সমালোচনা করেন। কলামে তিনি লেখেন, আতঙ্কের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, সংস্কারের ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরোনো আইকনকে এখন ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলা হচ্ছে সৌদি দৈনিক পত্রিকাগুলোয়। সবার কাছে একটি বার্তা পরিষ্কার, সরকারের মধ্যে কোনো ধরনের অ্যাক্টিভিজম, স্বাধীন কণ্ঠ বা দ্বিমত প্রকাশ করা মেনে নেওয়া হবে না।
হতাশা প্রকাশ করে খাসোগি লেখেন, ‘আমাদের সামনে কি আর কোনো পথ নেই? আমাদের, আমাদের স্ত্রী, স্বামী, সন্তানদেরও বেঁচে থাকা ও মুক্তভাবে চলাচলের বিনিময়ে আমরা কি শুধু নেতার সিদ্ধান্ত, আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর দর্শনের শুধু উজ্জ্বল দিক তুলে ধরে কথা বলব? আমাকে বলা হয়েছে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এসব মেনে নিতে, সামাজিক সংস্কার নিয়ে কথা বলতে। সেই সঙ্গে জলকাদায় ডুবে থাকা ইয়েমেন, তড়িঘড়ি করে অর্থনৈতিক সংস্কার, কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ, ইরানকে ঠেকাতে ইসরায়েলের সঙ্গে জোট বাঁধার আলোচনা এবং গত বছর সৌদি বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নীরব থাকতে বলা হয়েছে।’
‘যুবরাজকে আরও কিছু করতে হবে’
‘সৌদি নারীরা অবশেষে গাড়ি চালাতে পারবেন, ক্রাউন প্রিন্সের আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন’—এই শিরোনামে খাসোগির কলাম ছাপা হয় এ বছরের ২৫ জুন। এতে তিনি সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়ায় যুবরাজের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে যে সৌদিরা স্বাধীনতা ও আধুনিকায়নের জন্য সাহসের সঙ্গে কঠিন লড়াই করেছেন, তাঁদের বিষয়টিও যেন যুবরাজ ভুলে না যান, সেই আহ্বান জানান। তিনি নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দেওয়ার আন্দোলনে জড়িত হাথলোউল, আজিজা আল-ইউসেফ, ইমান আল-নাফজানসহ বন্দী সাহসী নারীদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।
ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধের আবারও আহ্বান
খাসোগি সর্বশেষ কলাম লেখেন এ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। ওই কলামে ইয়েমেন যুদ্ধের বিষয় তুলে আনা হয়। ওই কলামের শিরোনাম ছিল, ‘সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের তাঁর দেশের মর্যাদা অবশ্যই ফিরিয়ে আনা উচিত—ইয়েমেনে নিষ্ঠুর যুদ্ধ বন্ধের মধ্য দিয়ে’। যুবরাজকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি লেখেন, ইয়েমেনের মানুষ এখন দারিদ্র্য, কলেরা ও পানি–সংকটের সঙ্গে লড়াই এবং দেশকে গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত। ক্রাউন প্রিন্সের অবশ্যই এই সহিংসতার সমাপ্তি টানা উচিত এবং ইসলামের জন্মভূমির মর্যাদা ফিরিয়ে আনা উচিত।