লেবাননে গতকাল শনিবার টানা পঞ্চম দিনের মতো দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এদিন বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে টায়ার ও আসবাবপত্রের টুকরায় আগুন ধরান। এই অবস্থায় কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। নতুন সরকার গঠনে রাজনৈতিক নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এ হুমকি দিয়েছেন তিনি। খবর আল–জাজিরার।
লেবাননে বিক্ষোভের মধ্যেই গতকাল ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মানে নতুন করে পতন ঘটেছে। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। মুদ্রার দর পড়তে থাকায় জিনিসপত্রের দামও ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি দেশটিতে জ্বালানি সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে। এতে দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকা দৈনিক ১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎবিহীন থাকছে।
রাজধানী বৈরুতে গতকাল কিছু বিক্ষোভকারী ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁদের সঞ্চয়ী তহবিলে প্রবেশাধিকার দাবি করেন। পরে পার্লামেন্টের দিকে অগ্রসর হয়ে নিজেদের হতাশা ব্যক্ত করেন।
মধ্য বৈরুতের মার্টায়ার্স স্কয়ারে সমবেত হয়ে কিছু বিক্ষোভকারী গাড়ির টায়ারে আগুন জ্বালান। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘মুদ্রার মান কমতে কমতে ১ ডলার সমান ১০ হাজার ৫০০ পাউন্ডে (লেবাননের মুদ্রা) এসে ঠেকেছে। প্রতিটি ঘরে চার–পাঁচটি সন্তান ও তাদের বাবা–মায়েরা রয়েছেন। তাঁরা (দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকেরা) আমাদের খাবার দিক।’
লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির (এনএনএ) খবর অনুযায়ী, দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র শহর ত্রিপোলিতে বিক্ষোভকারীরা বেশ কিছু রাস্তা আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সব রাজনৈতিক কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি করেন তাঁরা।
এনএনএ আরও বলেছে, ত্রিপোলি, মিনিয়াহ ও আক্কার শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী বিভিন্ন সড়কও অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষুব্ধ লোকজন। অবরোধে ট্রাক, পানির ট্যাংক, আবর্জনা ফেলার কনটেইনার ও পাথর ব্যবহার করেন তাঁরা।
লেবাননের চলতি অর্থনৈতিক সংকটের শুরু ২০১৯ সালে। এ সংকটের জেরে দরিদ্র হয়ে পড়েন দেশের ৬০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেক। চাকরি হারান অনেকে। ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ভেঙে সংসারের খরচ বহন করা শুরু করেন লোকজন। জ্বালানি–সংকটে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে পড়ে।
এরই মধ্যে গত বছরে বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী দিয়াবের মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন। এরপর গত আগস্ট থেকে একরকম কান্ডারিবিহীন অবস্থায় চলছে লেবানন। অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী পদে সাদ আল–হারিরি মনোনীত হলেও প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধে নতুন সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হন তিনি।
এদিকে চলমান বিক্ষোভ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গতকাল এক টেলিভিশন ভাষণে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী দিয়াব তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব স্থগিত রাখার হুমকি দেন। সবাইকে সতর্ক করে বলেন, রাজনীতিবিদেরা নিজেদের মতপার্থক্য এক পাশে রেখে নতুন সরকার গঠন না করলে দেশ দ্রুত চরম বিশৃঙ্খলার দিকে এগিয়ে যাবে।