করোনা বাঁচতে দিল না সেই 'হিরো' চিকিৎসককে

চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। ছবি: সংগৃহীত
চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। ছবি: সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিষয়ে অন্যদের প্রথম সতর্ক করার চেষ্টা করছিলেন চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। শেষ পর্যন্ত তিনিই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। হাসপাতালের তথ্যের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান। উহান সেন্ট্রাল হসপিটালে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন লি। এই হাসপাতালেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন তিনি।

নিজে আক্রান্ত হওয়ার আগেই ভাইরাসের ব্যাপারে লি প্রথম সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলে।

উহানে সাত ব্যক্তির মধ্যে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ দেখতে পেয়েছিলেন লি। ভাইরাসটি তাঁর কাছে সার্সের মতো মনে হয়েছিল।

গত ৩০ ডিসেম্বর লি একটি চ্যাট গ্রুপে বার্তা দিয়ে তাঁর সহকর্মী চিকিৎসকদের ভাইরাসটির ব্যাপারে সতর্ক করেন। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তিনি তাঁর সহকর্মী চিকিৎসকদের সুরক্ষামূলক পোশাক পরার পরামর্শ দেন।

চার দিন পর লিকে তলব করে পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো। তাঁকে একটি চিঠিতে সই করতে বলা হয়। চিঠিতে লির বিরুদ্ধে মিথ্যা মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে তাঁর মন্তব্য সমাজের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। এই আটজনের মধ্যে চিকিৎসক লিও ছিলেন। পরে অবশ্য কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছে।

১০ জানুয়ারি লির কাশি শুরু হয়। পরদিন আসে জ্বর। দুই দিন পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৩০ জানুয়ারি চিকিৎসক লির করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লি চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েবোতে তাঁর গল্প শেয়ার করেছিলেন। পোস্টে চিকিৎসাধীন অবস্থার একটি ছবিও দিয়েছিলেন।

লির গল্প ওয়েবোতে ছড়িয়ে পড়লে তিনি ‘হিরো’ হিসেবে বাহবা পেতে শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই হিরো করোনাভাইরাসের কাছে হেরে গেলেন।

লির মৃত্যুর বিষয়ে প্রথমে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। পরে চীনের পিপলস ডেইলি নিশ্চিত করে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় লি মারা যান।

লির মৃত্যুর খবরে চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন।

আরও পড়ুন:
চীনের যে চিকিৎসক এখন ‘হিরো’