করোনা মহামারির শুরুর দিকে এমন একটা আশা তৈরি হয়েছিল যে বিশ্ব একদিন ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জন করবে। কিন্তু সে আশা এখন ফিকে হয়ে আসছে। তাই বিশ্বকে করোনার সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হতে পারে। আজ সোমবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
করোনা মহামারির এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এই ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এশিয়া থেকে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন, এই ভাইরাস দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ভাইরাসের নতুন অধিক সংক্রামক ধরন খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে টিকাদানের গতিও বেশ ধীর। এ কারণে শিগগিরই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের সম্ভাবনা নেই।
একটি অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যখন একটি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়, সেই পরিস্থিতিকে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ বোঝায়। সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া ও টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছানো যায়।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস যদি বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলে তার অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ অব্যাহত রাখে, তাহলে তা স্থানীয় রোগে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। তার মানে দাঁড়াবে—বিশ্বে তার হুমকি সব সময়ই থাকবে।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ডেভিড হেইম্যান বলেন, অনেক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। এতে কিছু মাত্রায় ‘ইমিউনিটি’ গড়ে উঠছে। টিকাদানও ত্বরান্বিত হচ্ছে। ফলে, ভারত ও ব্রাজিলে যে মাত্রায় করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়াচ্ছে, ভবিষ্যতে এমনটা হবে না। ছোট মাত্রার প্রাদুর্ভাব কম প্রাণঘাতী। তবে একটা অবিরত হুমকির আশঙ্কা থেকে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, মানুষের মধ্যে অনেক সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রাকৃতিক অগ্রগতি। রোগ একসময় স্থানীয় হয়ে যায়।
ডেভিড হেইম্যান বলেন, ‘আমরা তাদের (রোগ) সঙ্গে বাঁচতে শিখেছি। ঝুঁকি কীভাবে মূল্যায়ন করব, তা শিখি। কীভাবে কাউকে রক্ষা করতে চাই, তাও শিখি।’
করোনা মোকাবিলায় খুব দ্রুত টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এই টিকা খুবই কার্যকর। কিন্তু টিকার বৈশ্বিক বণ্টন শ্রমসাধ্য বিষয়। তা ছাড়া বণ্টনের ক্ষেত্রে অসমতাও আছে। ধনী দেশগুলো টিকা সংগ্রহ করে মজুত গড়ছে। কিন্তু দরিদ্র দেশগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে। টিকা গ্রহণ নিয়ে দ্বিধার সমস্যাটি বিশ্বের সব জায়গাতেই আছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, করোনা নির্মূলে যে গতিতে বিশ্বে টিকাদান দরকার, তা হচ্ছে না।
বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ তাদের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যাকে পূর্ণ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভুটানসহ কিছু দেশ তাদের জনসংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বা তার বেশি সংখ্যককে আংশিক ডোজ টিকা দিয়েছে। ভারত মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম মানুষকে আংশিক টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। আফ্রিকা অঞ্চলে এই হার ১ শতাংশের কিছু বেশি।
ডিউক ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক মাইকেল মেরসনের মতে, করোনা স্থানীয় রোগে পরিণত হতে পারে। আর তখন তা প্রাণঘাতী নাও থাকতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক এই পরিচালক বলেন, করোনা একপর্যায়ে একটি সাধারণ ঠান্ডা রোগের মতো হতে পারে।