করোনাভাইরাসের মধ্যে দূষণের হাত থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের পরামর্শে দিল্লি ছাড়লেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। শুক্রবার বিকেলে তিনি গোয়া পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে গেছেন কংগ্রেস নেতা ও ছেলে রাহুল গান্ধীও। দিন কয়েকের মধ্যে মেয়ে প্রিয়াঙ্কাও মায়ের সঙ্গে যোগ দেবেন। কংগ্রেস সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সোনিয়া গান্ধী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা হয়। কোন রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও জনশ্রুতি তাঁর ক্যানসার হয়েছিল। আপাতত ক্যানসারমুক্ত হলেও চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বিশেষ দৌড়ঝাঁপ করেন না।
সোনিয়া ইদানীং মারাত্মক ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছেন। হাঁপানির টানও আছে তাঁর। সেই কারণে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার ধকল নেন না। দিল্লির মাত্রাছাড়া দূষণ তাঁর পক্ষে মারাত্মক। দূষণ থেকে বাঁচতে সোনিয়া গত বছরেও গোয়া গিয়েছিলেন। এবারও চিকিৎসক তাঁকে হয় তামিলনাড়ু, নয় গোয়ায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী গতকাল তিনি গোয়ায় চলে যান।
ফুসফুসের সংক্রমণ বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে যাওয়ায় সোনিয়া জুলাই মাসের শেষে দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর তিনি বাড়ি ফেরেন। ১২ সেপ্টেম্বর রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন চেকআপের জন্য। সেই কারণে তাঁরা সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। বিহার নির্বাচনেও সোনিয়া প্রচারে যেতে পারেননি ফুসফুসের সংক্রমণের দরুন।
দীপাবলি উপলক্ষে দিল্লির বায়ুদূষণ প্রতিবছর খুবই বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই সঙ্গে চলছে করোনার তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ, যা চিকিৎসক ও সরকারের চিন্তা বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সোনিয়ার চিকিৎসকেরা অন্তত কিছুদিনের জন্য তাঁকে দিল্লি ছাড়ার পরামর্শ দেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, দিল্লির সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক হলেই সোনিয়া ফিরে আসবেন।
সোনিয়া ও রাহুল দিল্লি ছাড়লেন সেই সময়, যখন বিহার নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেসে নতুন করে গৃহবিবাদ শুরু হয়েছে। দলের খোলনলচে বদলাতে ও নির্বাচিত সভাপতির দাবিতে গত আগস্ট মাসে যাঁরা সরব হয়েছিলেন, সেই ‘জি–২৩’ গোষ্ঠীর নেতাদের কেউ কেউ আবার নতুন করে পুরোনো দাবিতে মুখর। গান্ধী পরিবারের অনুগত কোনো কোনো নেতা বিক্ষুব্ধদের দলত্যাগের পরামর্শও দিয়েছেন।
তবে গোয়া যাত্রার আগে সোনিয়া এ অশান্তি ও ক্ষোভ সাময়িকভাবে মেটানোর চেষ্টা করলেন। শুক্রবারই তিনি জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতিবিষয়ক তিনটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিতে জি–২৩ গোষ্ঠীভুক্ত চারজন নেতাকে তিনি নিয়েছেন। এ কমিটিগুলো তাঁকে সব সময় পরামর্শ দেবে।
জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন গুলাম নবী আজাদ ও বীরাপ্পা মইলি। পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন শশী থারুর ও আনন্দ শর্মা। অর্থনীতিবিষয়ক কমিটিতে নেওয়া হয়েছে পি চিদাম্বরমকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তিন কমিটিতেই রয়েছেন। মইলি ছাড়া বাকি চার নেতা কোনো না কোনো সময় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন।
কমিটি গঠন ও সেই সঙ্গে সোনিয়া–রাহুলের কিছুদিনের জন্য দিল্লি ত্যাগ সাংগঠনিক বিতর্ক আপাতত ধামাচাপা দিল বলে মনে করা হচ্ছে।