করোনাভাইরাসে চীনসহ বিভিন্ন দেশে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিশ্বে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এর উৎপত্তি ঘটলেও তা আর ওই অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে ইতিমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। এই ভাইরাস নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্নের অন্ত নেই। তেমনই কিছু প্রশ্ন ও এর উত্তর প্রকাশ করা হয়েছে বিবিসিতে। নিচে এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো—
ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সময়কাল কত?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা বুঝতে ন্যূনতম ১০ দিন সময় লাগতে পারে। কারণ, লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি ব্যক্তির গায়ে ২ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সুপ্তভাবে (ইনকিউবেশন) থাকতে পারে। তবে অনুমিত এ সময়টা আরও কম হতে পারে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন—এমন আশঙ্কায় থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ জানা ও বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ভাইরাস বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর উপায় প্রবর্তন করতে সহায়তা করে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি কি পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারেন?
অবশ্যই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হতে পারেন। কারণ, এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ সমস্যা অনুভব করে থাকেন। ফলে আশা করা যাচ্ছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ ব্যক্তিই সুস্থ হয়ে যাবেন।
তবে বয়স্ক, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো রোগী বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম, তাঁদের জন্য এই ভাইরাস বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে চীনে তিন শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাঁদের রোগের প্রকোপ কম, তাঁদের সুস্থ হতে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
করোনাভাইরাস কি উহান থেকে কেনা পণ্যের মাধ্যমে অন্য দেশে যেতে পারে?
এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে করোনা ও সার্সের মতো ভাইরাসগুলো আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁচি-কাশি থেকে ছড়াতে পারে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কোনো জিনিসের ওপর কফ ফেলেন বা হাঁচি দিয়ে থাকেন, তাহলে ওই সব বস্তু পরিবহন করা হলে একটা শঙ্কা থেকে যায়। তবে এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সতর্কতার বিষয় হয়ে যাবে এটি।
ঠান্ডাজনিত ভাইরাসগুলো মানুষের দেহের বাইরে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় বেঁচে থাকে। তবে নরোভাইরাস (বমি ও ডায়রিয়ার মতো বিষয়) শরীরের বাইরে কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে।
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এই ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়ি থাকে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে থাকা পরিবারের সদস্য, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।
চীন থেকে এ ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কোনো কারণ আছে কি?
অবশ্যই! এ দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ প্রাণীদের কাছাকাছি থাকে। এই করোনাভাইরাস অবশ্যই কোনো প্রাণী উৎস থেকে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস সাপ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে সার্সভাইরাসও চীন থেকে সৃষ্টি হয়েছিল, যা বাদুড় ও খাটাশ (একধরনের বনবিড়াল) থেকে ছড়িয়েছিল।
করোনা ও সার্সের মতো নতুন ভাইরাসের সংক্রমণের প্রাথমিক ঘটনাগুলো ঘটেছে ‘সাউথ চায়না সিফুড হোলসেল মার্কেট’ থেকে। ওই বাজারে মুরগি, বাদুড়, সাপসহ জীবন্ত বন্য প্রাণী বিক্রি হয়।
সার্স কীভাবে ছড়াল? এর সূত্রপাত কীভাবে?
করোনাভাইরাসের অপর একটি রূপ হলো সার্সভাইরাস (২০০৩ সালে ছড়িয়েছিল)। এই ভাইরাস বাদুড় থেকে খাটাশে সংক্রমিত হয়েছিল। পরে তা খাটাশের সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এসব ব্যক্তির হাঁচি-কাশি যেসব বস্তুতে লেগেছিল, সেসবের সংস্পর্শে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
করোনাভাইরাস রোধে কি টিকা দেওয়া সম্ভব?
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের মতো রোগগুলোর কোনো টিকা নেই। তবে টিকা আবিষ্কারে গবেষকেরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কারণ এ ধরনের ভাইরাস এর আগে দেখা যায়নি। ফলে চিকিৎসকেরা এর আগপর্যন্ত এ ধরনের ভাইরাস সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলেন।