করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ছয় চিকিৎসকের মৃত্যু

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি চিকিৎসক ও নার্স। ছবি: রয়টার্স
চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি চিকিৎসক ও নার্স। ছবি: রয়টার্স

চীনের উহানের একটি হাসপাতালের নার্স নিং ঝু (ছদ্মনাম)। সহকর্মীদের মতো তাঁরও এখন নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোগীদের সেবা দেওয়ার বদলে তিনি নিজেই এখন কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। হাজার হাজার রোগীর মতো ঝু নিজেও যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত!

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসক-নার্সরাও দ্রুত নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, আজ শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে ছয় চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। দেশজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৭১৬ জন চিকিৎসক-নার্স। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ হাজার ১০২ জনই হুবেই প্রদেশের উহান শহরের। এই প্রথমবারের মতো আক্রান্ত চিকিৎসকদের সংখ্যা প্রকাশ করল চীন।

জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপপরিচালক জেং ইজিনের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশই চিকিৎসক। আর মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। মারা যাওয়া চিকিৎসকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জেং বলেছেন, ‘সব চিকিৎসকদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের এখন আক্রান্ত চিকিৎসকদের সুস্থ করে তোলার দিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে।’

উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের এক চিকিৎসক চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে লিখেছেন, তাঁর প্রায় ১৫০ জন সহকর্মী নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই চিকিৎসক নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই চিকিৎসক গত বুধবার ওয়েইবোতে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘আমি যেখানে চিকিৎসাধীন আছি, সেখানকার রোগীদের বেশির ভাগই আমার সহকর্মী।’

বৃহস্পতিবার এক দিনেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪২ জন। ছবি: রয়টার্স

ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের অধ্যাপক বেনজামিন কাউলিং বলেছেন, চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব চিকিৎসকদের। অথচ তাঁদেরই আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

এর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় দেশটির সাধারণ মানুষ। প্রাণঘাতী করোনার ব্যাপারে তিনিই সর্বপ্রথম সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন। ৭ ফেব্রুয়ারি এই করোনায় আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয় তাঁর।

উহান সেন্ট্রাল হসপিটালে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ লি উহানের সাত ব্যক্তির মধ্যে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ দেখতে পেয়েছিলেন। ভাইরাসটি তাঁর কাছে সার্সের মতো মনে হয়েছিল। কিন্তু সে সময় পুলিশ তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলে। গত ৩০ ডিসেম্বর লি একটি চ্যাট গ্রুপে বার্তা দিয়ে তাঁর সহকর্মী চিকিৎসকদের ভাইরাসটির ব্যাপারে সতর্ক করেন। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তিনি তাঁর সহকর্মী চিকিৎসকদের সুরক্ষামূলক পোশাক পরার পরামর্শ দেন। চার দিন পর লিকে তলব করে পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো। তাঁকে একটি চিঠিতে সই করতে বলা হয়। চিঠিতে লির বিরুদ্ধে মিথ্যা মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে তাঁর মন্তব্য সমাজের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

এদিকে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনেই চীনে মারা গেছে ২৪২ জন, এখন পর্যন্ত যা এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ।