বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পবর্তশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বেজক্যাম্প সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নেপাল। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং মানুষের কর্মকাণ্ডে বর্তমান বেজক্যাম্প অনিরাপদ হিসেবে মনে হওয়ায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির
বসন্তে পর্বতারোহণের মৌসুমে দেড় হাজারের বেশি মানুষ ওই ক্যাম্প ব্যবহার করে থাকেন। ক্যাম্পটি কুম্বু হিমবাহে অবস্থিত, যেটি দ্রুত গলে পাতলা হয়ে যাচ্ছে।
নেপালের পর্যটন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, বেজক্যাম্প করার জন্য কম উচ্চতায় এভারেস্টের নতুন একটি এলাকা খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে সারা বছর বরফ থাকে না।
গবেষকেরা বলছেন, গলে যাওয়া পানির কারণে হিমবাহ অস্থিতিশীল হয়ে যাচ্ছে। পর্বতারোহীরা বলছেন, তাঁরা ঘুমানোর সময় বেজক্যাম্পের হিমবাহে ফাটল ধরা দেখতে পাচ্ছেন।
নেপালের পর্যটন বিভাগের মহাপরিচালক তারানাথ অধিকারী বলেন, ‘আমরা বেজক্যাম্প নতুন স্থানে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিগগিরই আমরা সব পক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নেব। বেজক্যাম্পে আমরা যে পরিবর্তনগুলো দেখছি, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই পর্বতারোহণ ব্যবসার জন্যও এটি অপরিহার্য।’
তারানাথ বলেন, বর্তমানে এভারেস্টের বেজক্যাম্প ৫ হাজার ৩৬৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। নতুন যে বেজক্যাম্পটির কথা ভাবা হচ্ছে, তার অবস্থান হবে এর ২০০ থেকে ৪০০ মিটার নিচে। এভারেস্ট অঞ্চলে পর্বতারোহণের সুবিধার্থে ও নিরীক্ষণের জন্য নেপাল সরকারের গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুসরণ করে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমালয়ের অন্যান্য হিমবাহের মতো কুম্বু হিমবাহও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত গলছে ও পাতলা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখান, এভারেস্টের বেজক্যাম্পের কাছের হিমবাহের পুরুত্ব প্রতিবছর ১ মিটার করে পাতলা হচ্ছে। হিমবাহের বেশির ভাগ অংশই পাথুরের অংশে আবৃত, তবে উন্মুক্ত বরফের এলাকাও রয়েছে, যাকে ‘আইস ক্লিফস’ বলা হয়। আইস ক্লিফগুলো গলে হিমবাহকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে বলে জানিয়েছেন স্কট ওয়াটসন নামের একজন গবেষক।
ওয়াটসন বলেন, ‘যখন আইস ক্লিফগুলো এভাবে গলতে থাকে, তখন বরফের ওপরে থাকা নুড়ি ও পাথরের টুকরা সরে যায় এবং স্থানচ্যুতি ঘটে। এরপর পানি গলতে গলতে জলাশয়ের মতো তৈরি হয়। আমরা হিমবাহের উপরিভাগে যে বর্ধিত শিলাপ্রপাত এবং গলিত পানির প্রবাহ দেখতে পাই, যা বিপজ্জনক হতে পারে। হিমবাহটি প্রতিবছর ৯৫ লাখ ঘনমিটার পানি হারাচ্ছে।
পর্বতারোহী ও নেপালি কর্তৃপক্ষ বলছে, বেজক্যাম্পের ঠিক মাঝখানে একটি পানির স্রোতোধারা ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। হিমবাহের পৃষ্ঠে ফাটল ও চিড় ধরার আগের চেয়ে বেশি বড় দেখা যাচ্ছে।’
মার্চ থেকে মে মাস মূলত পর্বতারোহণের মৌসুম। এ সময় বেজক্যাম্প পরিষ্কারে কাজ করেন নেপালি সেনাবাহিনীর সদস্য কিশোর অধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্চর্যজনকভাবে দেখি, যেখানে আমরা ঘুমিয়েছি, সেখানে রাতারাতি চিড় দেখা যাচ্ছে।’