সমুদ্রপথে ঢুকে ভারতে আরও একবার জঙ্গি হানার ছক কষছে সন্ত্রাসীরা। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লাম্বা গতকাল মঙ্গলবার এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক আলোচনায় এই হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের পালন করে এমন একটা দেশে আশ্রিত জঙ্গিরা এই ছক কষেছে। ওই দেশের লক্ষ্য একটাই, ভারতকে নড়বড়ে করে দেওয়া।
১১ বছর আগে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে সমুদ্রপথে ভারতে ঢুকেছিল লস্কর-ই–তাইয়েবার ১০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী। মুম্বাই হামলার খলনায়ক ছিল তারাই। ভারতীয় সমুদ্রসীমায় ঢুকে একটি নৌকা দখল করে তারা এ দেশে ঢুকেছিল। নৌসেনাপ্রধান বলেন, সন্ত্রাসীরা নানা রকমের ছক কষছে। সমুদ্রপথে এসে হামলা চালানোর ছক তার মধ্যে অন্যতম।
অ্যাডমিরাল লাম্বা বলেন, সন্ত্রাসের চরিত্র যেমন বদলাচ্ছে, গোটা বিশ্বেই তেমন সন্ত্রাসী হামলার রকমফের ঘটছে। তাঁর কথায়, সন্ত্রাসবাদ ভারতের একটা বড় মাথাব্যথা। এর কারণ, এই সন্ত্রাসের মদদদার এক রাষ্ট্রীয় শক্তি। সেই শক্তি ভারতের অগ্রগতি রুখতে চায়। বিব্রত করে রাখতে চায়। পুলওয়ামায় ওই শক্তিই সক্রিয় ছিল।
আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের সতর্ক করে অ্যাডমিরাল লাম্বা বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ কত দ্রুত বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হতে পারে, তা আমরা দেখছি। কোনো একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিশেষ এক ধরনের কাজকর্ম আগামী দিনে সর্বজনীন সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। সন্ত্রাস দমনের কাজে ও সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট হতে পারে না। সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় পৃথিবীর সব শক্তিকে একজোট হতে হবে।’
নৌপ্রধানের এই সতর্কবার্তার মধ্যেই পাকিস্তান দাবি জানিয়েছে, তাদের সমুদ্রসীমায় একটি ভারতীয় সাবমেরিনকে দেখা গেছে। পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের টুইটার হ্যান্ডেলে এই দাবি জানিয়ে বলা হয়, সাবমেরিনটিকে প্রতিহত করা হয়েছে। তবে আক্রমণ করা হয়নি। পাকিস্তান শান্তি চায় বলেই এই সিদ্ধান্ত। এই দাবির সমর্থনে পাকিস্তান একটা ভিডিও প্রচার করেছে। তাতে সমুদ্রে একটি ডুবোজাহাজের সামান্য কিছু অংশ দৃশ্যমান। ভারত সরকার অথবা ভারতের নৌবাহিনী এই দাবির কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। যদিও একটি সংবাদমাধ্যম নৌবাহিনী সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে জানিয়েছে, বিষয়টির তদন্ত হচ্ছে।
পুলওয়ামা হামলা ও এর বদলায় বালাকোট অভিযানের পর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে অনেকটাই। সীমান্ত উত্তেজনাও অব্যাহত। দুই দেশের দুই যুদ্ধবিমান ধ্বংস ও ভারতীয় বিমান সেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেওয়ার পর যুদ্ধের আশঙ্কা কিছুটা স্তিমিত। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ভারত যা করেছে তা নিতান্তই ‘পাইলট প্রজেক্ট’ বা নমুনা মাত্র। প্রয়োজনে আরও বড় আঘাত হানতে দেশ প্রস্তুত।