মিয়ানমারের বাগো শহরে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে বিক্ষোভকারীদের ওপর চরম দমন–পীড়ন শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। চলে শনিবার বিকেল অবধি। এ সময় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর রাইফেল গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৮২ বিক্ষোভকারী। অধিকারবিষয়ক সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
আজ শনিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গুন থেকে ৯০ কিলোমিটার উত্তর–পূর্বে বাগো শহরের অবস্থান। শুক্রবার রাতে হঠাৎ উত্তাল হয়ে ওঠে শহরটি।
নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহতদের মরদেহ সেনাবাহিনীর ট্রাকে করে স্থানীয় জেয়ার মুনি প্যাগোডায় নিয়ে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা এখনো সুস্পষ্ট নয়। তবে এএপিপি ও দেশটির গণমাধ্যম মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৮২ জন।
বিক্ষোভকারী ইয়ে হুতুত বলেন, ‘তারা (নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা) প্রতিটি ছায়া লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে। এটা গণহত্যার শামিল।’ সংঘর্ষের ঘটনায় শহর ছাড়তে শুরু করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই আশপাশের গ্রামগুলোয় আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে বাগো শহরে সংঘাত ও হতাহতের বিষয়ে জানতে জান্তা প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।
মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন হলেও এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দেশটির রাজপথে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভে রক্ত ঝরেছে। শুক্রবার এএপিপি জানিয়েছিল, দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে জান্তা সেনা–পুলিশের গুলিতে শিশুসহ অন্তত ৬১৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বাগোতে নিহতের সংখ্যা যোগ হলে তা ৭০০ ছাড়িয়ে যাবে।
তবে নিহতের এ সংখ্যা স্বীকার করেনি জান্তা সরকার। গতকাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাউ মিন তুন রাজধানী নেপিডোতে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন ‘সহিংস সন্ত্রাসী’ ও ১৬ পুলিশ মারা গেছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ঘটেনি।
জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে মিয়ানমারের স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র দলগুলোর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। গতকাল দেশটির শান রাজ্যে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি সশস্ত্র দলের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে পুলিশ স্টেশনে হামলা চালান।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান রাজ্যের নাউংমন পুলিশ স্টেশনে হামলায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে শান নিউজ। তবে শিউ ফি মাইআই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, নিহত পুলিশের সংখ্যা ১৪।
এর আগে গত ২৭ মার্চ মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) থাইল্যান্ডের সীমান্তসংলগ্ন একটি সীমান্তচৌকিতে হামলা চালিয়ে ১০ সেনাকে হত্যা করে। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে কারেন রাজ্যের দুটো গ্রামে বিমান হামলা চালায় জান্তা। এতে নিহত হন অন্তত দুজন।
নিজ দেশের জনগণের ওপর জান্তা সরকারের রক্তক্ষয়ী দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের প্রতিনিধি খাউ মোয়ে তুন।
গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তিনি পরিষদের প্রতি মিয়ানমারে নো ফ্লাই জোন গঠন, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব দেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দ্রুত আপনাদের কঠোর ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে। দয়া করে কিছু করুন।’
তবে মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদ কতটা কঠোর হতে পারবে, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা, কঠোর উদ্যোগ নিতে হলে স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার সমর্থন প্রয়োজন হবে। দেশ দুটি জান্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো বড় কোনো পদক্ষেপ আটকে দেবে বলে আগেই জানিয়ে রেখেছে।