উত্তর কোরিয়ায় এক অস্ট্রেলীয় শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটি। অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, অ্যালেক সিগলি নামের ওই শিক্ষার্থীকে আটক করেছে উত্তর কোরিয়া। এ ব্যাপারে ‘জরুরি ভিত্তিতে’ নিশ্চিত হতে চাইছে তারা।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৯ বছর বয়সী অ্যালেক সিগলি কিম-ইল-সাং বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরীয় সাহিত্য নিয়ে স্নাতকোত্তর করছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষ তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছে বলে অ্যালেকের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার এক মন্ত্রী জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি উত্তর কোরিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।
আজ বৃহস্পতিবার অ্যালেকের পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অ্যালেককে আটক করা হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন তাঁরা। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে অ্যালেকের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি তাঁর পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের। এমনটি তিনি এর আগে কখনো করেননি।
পরিবারের সদস্যেরা বলছেন, অ্যালেক একজন জ্ঞানী ব্যক্তি এবং ভালো বক্তা। কেন তাঁকে আটক করা হতে পারে, এ বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না তাঁরা।
অস্ট্রেলিয়ার পার্থের বাসিন্দা অ্যালেক সিগলি গত বছর থেকে উত্তর কোরিয়ায় আছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। গত মার্চে দ্য গার্ডিয়ানে লেখা এক কলামে অ্যালেক জানান, তিনিই একমাত্র অস্ট্রেলীয়, যিনি উত্তর কোরিয়ায় আছেন। এর আগে চীনে পড়াশোনা করার সময় উত্তর কোরিয়ার বেশ কয়েকজন নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। এরপরই উত্তর কোরিয়া যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। ওই কলামে তিনি লেখেন, দীর্ঘমেয়াদি ভিসা পাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পিয়ংইয়ংয়ে আসাটা নজিরবিহীন। তিনি এই শহরের যেখানে–সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারেন। কোনো ধরনের নজরদারি হয় না। গত বছর স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যালেক বলেন, এখানে কোনো ধরনের হুমকি অনুভব করেন না তিনি।
এর আগেও উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি নাগরিক নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। অনেক সময় অনধিকার প্রবেশের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান এক মিশনারিকে আটক করে উত্তর কোরিয়া। ধর্মীয় পুস্তকাদি বিতরণের দায়ে তাঁকে আটক করা হয়। পরে উত্তর কোরিয়া জানায়, জন শর্ট নামের ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ায় ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অটো ওয়ার্মবিয়ারকে। তাঁর অল্প দিনের মধ্যেই তিনি কোমায় চলে যান। পরে উত্তর কোরিয়া ওয়ার্মবিয়ারকে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়। ওয়ার্মবিয়ারকে তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে সিনসিনাটির একটি হাসপাতালে মারা যান অটো। অটো ওয়ার্মবিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে অবকাশযাপনের জন্য উত্তর কোরিয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে হোটেলের একটি পোস্টার চুরি করার অপরাধে তাঁর সাজা হয়।