ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, বিদেশি শক্তি উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ‘উপসাগরের দিকে নজর দেবেন না।’ তেহরানে বার্ষিক সামরিক কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় তিনি বলেন, খুব শিগগির ইরান জাতিসংঘে উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন একটি উদ্যোগের পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে।
সৌদি আরবে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠানোর ঘোষণার পর রুহানি ওই হুঁশিয়ারি দিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ শিয়া-অধ্যুষিত ইরান ও সুন্নি সৌদি আরব। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। এর মধ্যে ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দুটি বড় তেল শোধনাগারে ড্রোন হামলা হয়। এতে দেশটির দৈনিক তেল উৎপাদনের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমে যায়। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এর জন্য ইরানকে দায়ী করেছে। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। এই পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দেয় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞদের মত, ইরানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপের প্রয়োজন হলে ওই সেনাদের কাজে লাগাতে পারে মার্কিন প্রশাসন।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে রুহানি বলেন, ‘আমাদের জনগণ ও অঞ্চলের জন্য সমস্যা ও অনিরাপত্তার কারণ হতে পারে বিদেশি শক্তিগুলো।’ উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন উদ্যোগ পরিকল্পনা আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পেশ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের প্রতিবেশীদের জানাচ্ছি যে, আপনাদের প্রতি বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের হাত এগিয়ে দিচ্ছি আমরা।’
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি তেহরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের উত্তেজনা শুরু হয়, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
শনিবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবদেল আল জুবেইর বলেছেন, হামলার ঘটনা তদন্ত করে দেখছেন তাঁরা। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিদেশিদের উদ্দেশে রুহানি বলেন, ‘আপনাদের উপস্থিতি সব সময় বেদনা–দুর্দশা নিয়ে এসেছে। তাই আমাদের অঞ্চল থেকে নিজেদের দূরে রাখুন।’
এদিকে ইয়েমেনে শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশটির হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবে হামলা স্থগিত রাখার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। ইয়েমেনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিথস গতকাল বলেন, হুতিদের এই পদক্ষেপ একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। কারণ, এটা যুদ্ধ অবসানের পথকে প্রশস্ত করবে।