ফিলিস্তিন ইস্যুতে সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে স্বীকৃতির প্রশ্নে এগোবে না পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি আজ সোমবার এ কথা বলেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফর শেষে পাকিস্তানে ফিরে মুলতানে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়ে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বক্তব্য তিনি শুনেছেন। সঙ্গে এ-ও বলেছেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্থায়ী ও পরিপূর্ণ সমাধান হওয়ার আগে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না পাকিস্তান।
শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেন, ‘ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনো পরিস্থিতিতেই পাকিস্তান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে না। প্রধানমন্ত্রী এটি বলেছেন। আমি বক্তব্যটি স্পষ্ট করলাম। এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই এবং ছিলও না।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের স্বার্থকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই এবং সে ক্ষেত্রে চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হয় না। আমাদের একটি নীতি আছে এবং আমরা এতে অবিচল আছি।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলার সময় ভারত প্রসঙ্গও উঠে আসে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি বলেছেন, আরব আমিরাত বা সৌদি আরব—কোনো দেশই ভারতকে পাকিস্তানের বিকল্প বলে মনে করে না। যদি ভারত এ ধরনের প্রচেষ্টা চালায়, তবে তা তাদের ‘ভুল–বোঝাবুঝি’।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়। কিছুদিনের মধ্যে একই পথে হাঁটে বাহরাইনও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করে এই দুই দেশ। এরপর সুদান ও ভুটান ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছর পর ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশশাসিত ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্ম হয়। পশ্চিমা বিশ্বের বানানো এই রাষ্ট্রকে কখনো মেনে নেয়নি আরবরা। ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও সবশেষ ১৯৭৩ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধ হয় ইসরায়েলের। প্রতিবারই আরবরা পরাজিত হয়। এরপর থেকেই ইহুদিদের কাছে জমি হারাতে বসে ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুটি রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সংঘাত মেটানোর চেষ্টা করলেও তা এখনো সফলতার মুখ দেখেনি। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আরব দেশগুলো প্রধান তিনটি শর্ত দিয়েছিল।
সেগুলো হলো যুদ্ধের সময় আরব দেশগুলোর দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়া, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনের দখল করা জমি হস্তান্তর। সেই শর্তের কোনোটা পূরণ না হওয়ার পরও আরব দেশগুলো ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন।