মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ৫২টি স্থাপনায় হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা সম্পদের ওপর হামলা চালালে এমন পাল্টা হামলা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ার করেন। তিনি বলেছেন, ইরান হামলা করলে ৫২টি স্থাপনায় ‘খুব দ্রুত খুব শক্তিশালী’ হামলা চালানো হবে।
মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এ ঘটনায় ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, এক টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, জেনারেলের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ইরান খুব সাহসের সঙ্গে বলে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু স্থাপনা তাদের লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ৫২টি স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে রেখেছে। এর মধ্যে কিছু ইরান এবং ইরানের সংস্কৃতির জন্য খুবই উচ্চপর্যায়ের ও গুরুত্বপূর্ণ। তেহরান হামলা চালালে ওই সব স্থানে খুবই দ্রুত খুব শক্তিশালী হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো হুমকি চায় না!’
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানির গাড়িবহর লক্ষ্য করে গত শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় সোলাইমানির সঙ্গে কাতাইব হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিসসহ ১০ জন নিহত হন। এর আগে গত রোববার ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় মিলিশিয়া গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর (হিজবুল্লাহ ব্রিগেড) অন্তত ২৫ সদস্য নিহত হন। ওই হামলার ঘটনার জেরে ক্ষোভ জানাতে বিক্ষোভকারীরা গত মঙ্গলবার ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাইরের দিকের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষোভে হাজার হাজার শোকাহত মানুষের সঙ্গে আবু মাহদি আল-মুহানদিসও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, ১৯৭৯ সালে তেহরানে যে ৫২ জন মার্কিন নাগরিককে মার্কিন দূতাবাস দখল করে জিম্মি করা হয়েছিল ৫২টি স্থাপনা তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করবে।
বাগদাদে সোলাইমানির জানাজার বিশাল শোকযাত্রা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প এ টুইট করেন।
শোকযাত্রা শেষের অল্পসময় পর মার্কিন দূতাবাসের কাছে গ্রিন জোনসহ কয়েকটি এলাকায় একাধিক রকেট হামলার ঘটনা ঘটে। ইরাকি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ওই হামলায় কেউ আহত হয়নি। এখন পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী। ইরানের মদদপুষ্ট মিলিশিয়াদের সাম্প্রতিক সময়ের অন্য হামলাগুলোর জন্য দায়ী করা হয়েছিল।
৬২ বছর বয়সী জেনারেল সোলাইমানিকে সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত সমরবিদ মনে করা হচ্ছিল। তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো সমরজগতের বিশেষ নজরে ছিলেন। সিআইএ-মোসাদের হিটলিস্টে সোলাইমানি ছিলেন বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।
জেনারেল সোলাইমানি নিজ দেশ ইরানে হাজি কাশেম নামে পরিচিত। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার হলেও অলিখিতভাবে তাঁর পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে ছিল।
রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘কুদস ফোর্স’ সোলাইমানির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছিল। ২১-২২ বছর ধরে বাহিনীটি গড়ে তোলেন তিনি।
‘কুদস ফোর্স’ অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশন ইউনিট’। এই ফোর্সের প্রধান কর্মক্ষেত্র মূলত ইরানের বাইরে। কুদস ফোর্স ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন সোলাইমানি।
সোলাইমানি তাঁর বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন। খামেনি জেনারেল সোলাইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দেন। বিপ্লব-উত্তর ইরানে এই খেতাব তিনিই প্রথম পান।
আরও পড়ুন:
সোলাইমানিকে হারিয়েও ইরানই এগিয়ে
কাশেম সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে সক্ষম ইরান?
সোলাইমানিকে হত্যার জন্য এই সময় বেছে নেওয়া কেন?
বিশ্লেষণ: কাসেম সোলাইমানির বিকল্প পাওয়া ইরানের জন্য কঠিন হবে