ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে উড়েছিল উড়োজাহাজটি। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনেরা উড়োজাহাজের যাত্রীদের বিদায় জানিয়েছিলেন। স্বজনদের কেউ কেউ হয়তো বিমানবন্দর ছেড়ে চলেও গেছেন। কে জানত মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই এমন ভয়ংকর খবর শুনতে হবে। শ্রীবিজয়া এয়ার কোম্পানির বোয়িং ৭৩৭ ফ্লাইটটি জাকার্তা থেকে ওয়েস্ট কালিমান্তান প্রদেশের রাজধানী পনতিয়ানাক যাওয়ার পথে জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়। ৬২ আরোহীর কেউ বেঁচে নেই বলে ধারণা করছেন উদ্ধারকারীরা।
দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় হাজারো দ্বীপের মধ্যে আকাশপথে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই এলাকায় বেশ কয়েকটি ভয়ংকর বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। এই এলাকায় বিমান সংস্থাগুলোর বাণিজ্য ফুলেফেঁপে উঠেছে। তবে বিমানসংস্থাগুলোতে প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাব রয়েছে।
নিরাপত্তার কারণে ইউরোপীয় আকাশপথে ইন্দোনেশিয়ার উড়োজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরে ২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কালো তালিকা থেকে ইন্দোনেশীয় এয়ারলাইনসকে বাদ দেয়।
ইন্দোনেশিয়ার ভয়ংকর উড়োজাহাজ দুর্ঘটনাগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে এএফপি। একনজরে দেখা যাক সেগুলো।
১৯৯৭ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ভয়ংকর বিমান দুর্ঘটনায় ২৩৪ জন নিহত হয়। সে সময় মেদানস বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পর গারুদা ইন্দোনেশিয়া পরিচালিত এ-৩০০ বিফোর উড়োজাহাজটি উত্তর সুমাত্রার সংকীর্ণ একটি উপত্যকায় বিধ্বস্ত হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়া উপকূলে লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স এইট বিধ্বস্ত হয়। এতে উড়োজাহাজে থাকা ১৮৯ জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হয়। উড়োজাহাজটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
২০১৪ সালে ঝোড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়ে এয়ার এশিয়ার একটি উড়োজাহাজ জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৬২ জন নিহত হয়। ইন্দোনেশিয়ার শহর সুরাবায়া (Surabaya) থেকে সিঙ্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল উড়োজাহাজটি।
২০০৫ সালে মান্ডালা এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটি সুমাত্রা দ্বীপের ২০ লাখ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত মেদান শহরতলিতে বিধ্বস্ত হয়। এতে উড়োজাহাজের ১৫০ জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হয়।
২০১৫ সালে মেদানে আবারও আরেকটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। ওই বছরের জুন মাসে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই ইন্দোনেশিয়া সামরিক বিমান মেদানের আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ১২২ জন আরোহী নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ছিলেন সেনাসদস্য ও তাঁদের পরিবার। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় ও ২০ জন নিহত হয়।
১৯৯১ সালে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। পূর্ব জাকার্তায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে ১৩৫ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে ১২১ জন ছিলেন বিমানবাহিনীর সদস্য। ১২ জন ছিলেন ক্রু। এ ছাড়া বিধ্বস্তস্থলে দুজন নিহত হয়। এই দুর্ঘটনায় একজন যাত্রী বেঁচে যান।
নদীতে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
১৯৯৭ সালে সিল্ক এয়ার ফ্লাইট পালেমবাং এলাকার কাছে একটি নদীতে বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটি জাকার্তা থেকে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছিল। উড়োজাহাজের ১৪০ জন যাত্রী ও ক্রু সবাই নিহত হয়।
২০০৭ সালে নববর্ষের দিনেই সুলাওয়েসি দ্বীপে এডাম এয়ারের একটি উড়োজাহাজ সাগরে বিধ্বস্ত হয়। এতে উড়োজাহাজের ১০২ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়। পরে এই এয়ারলাইনসকে নিষিদ্ধ করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কারণে উড়োজাহাজের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন।