ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাসী একটা জিনিস দেখছে, দেশটির সরকার তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রের জন্য বিশ্ব দরবারে ক্রমাগত ভিক্ষা চাইছে। শুধু ভিক্ষা চাওয়া নয়, দেশটির দাবি, ‘আমাদের আকাশকে বিমান চলাচলমুক্ত করে দাও’। কিন্তু চাইলেই ভিক্ষা পাওয়া যায় না। পশ্চিমাদের কাছ থেকে অস্ত্র ভিক্ষা না পেলে কী হবে, সেটা অবশ্য প্রকাশ্যে বলছেন না ইউক্রেনের নেতারা। আমরা ধরে নিতেই পারি, অস্ত্র ভিক্ষা না পেলে তারা শিষ্টাচার ভুলে যেকোনো কিছু করতে পারে।
ইউক্রেন সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড তেমনই ইঙ্গিত দেয়। শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ বলতে আমরা যা বুঝি, দেশটি তা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্র পাশে থাকায় দেশটির নেতারা হয়তো ধরে নিয়েছেন যে, তাঁরা এখন যেমন খুশি আচরণ করতে পারার মতো বলবান।
চলমান যুদ্ধের শুরু থেকে জাপান ইউক্রেনের পাশে রয়েছে। টোকিওর পক্ষ থেকে দেশটিকে উদার হাতে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এমনকি দূরের দেশ হয়েও ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুদের জন্য দুয়ার খুলে দিয়েছে জাপান। শরণার্থী গ্রহণের বিষয়ে জাপানিদের মধ্যে বরাবরই আতঙ্ক কাজ করে। তারপরও ইউক্রেনীয়দের জন্য বিরল পদক্ষেপ নিয়েছে জাপান সরকার।
তবে এত কিছুর পরও জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে কিয়েভ। এর প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কিছু ভিডিও। একটি ভিডিওতে ইউক্রেন সরকার যুদ্ধে তাদের পাশে দাঁড়ানো দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৩১টি দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জাপানের নাম উল্লেখ করা হয়নি, যা জাপানি নেতৃত্বকে হতাশ করেছে।
এ বিষয়ে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইউক্রেনের কাছ থেকে যে ব্যাখ্যা তিনি পেয়েছেন, তা হলো সামরিক সহায়তা প্রদানের জন্য ভিডিও বার্তায় কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। এর অর্থ হলো অস্ত্র ভিক্ষা চেয়েও জাপানের কাছে তা পায়নি ইউক্রেন। তাই মানবিক ও আর্থিক সহায়তা পেলেও জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে নারাজ দেশটি।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, যুদ্ধের মধ্যে মানবিক ও আর্থিক সহায়তার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ইউক্রেন। দেশটির পক্ষ থেকে জাপানকে জানানো হয়েছে, যে ভিডিওর কথা বলা হচ্ছে, সেটি ইউক্রেন সরকারের নয় বরং দেশটির এক সামরিক কর্মকর্তার।
ইউক্রেন নিয়ে ভিন্ন এক বিড়ম্বনায় পড়েছে জাপান। ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত অন্য একটি ভিডিওতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের জার্মান নেতা এডলফ হিটলার ও ইতালির ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপ্রধান বেনিতো মুসোলিনির ছবির সঙ্গে জাপানের প্রয়াত সম্রাট হিরোহিতোর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘১৯৪৫ সালে ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদ পরাজিত হয়।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিষয়টি জাপান সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়। জাপান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ভিডিওর বিষয়ে ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেনি জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে জাপানের কয়েকজন রাজনীতিক ব্যক্তিগতভাবে এ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন। সমালোচনার মুখে ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে এডিট করে সম্রাট হিরোহিতোর ছবি বাদ দিয়ে সেটি আবার প্রকাশ করা হয়।
ভিডিওটির বিষয়ে গত সপ্তাহে মুখ খোলেন জাপানের ডেপুটি চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিকো ইসোজাকি। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রয়াত সম্রাট হিরোহিতো জাপানিদের কাছে পরম শ্রদ্ধার ব্যক্তি। হিটলার ও মুসোলিনির সঙ্গে তাঁকেও একই কাতারে যুক্ত করা দুঃখজনক। এরপরও চরম দুরবস্থার মধ্যে ইউক্রেনের অসহায় মানুষের পাশে থাকবে জাপান।