আফিম ছেড়ে গোলাপ চাষ

ব্যাগে গোলাপ ভরছেন দুই আফগান। ছবি: এএফপি
ব্যাগে গোলাপ ভরছেন দুই আফগান। ছবি: এএফপি

আফিম চাষ, হেরোইন উৎপাদন আর সন্ত্রাসী হামলা-এই যেন আফগানিস্তানের গত কয়েক দশকের দৃশ্য। তবে এ দৃশ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। দেশটির অনেক কৃষকই আফিম চাষ বাদ দিয়ে গোলাপ চাষে মজেছেন। সে গোলাপ থেকে তৈরি হচ্ছে গোলাপজল আর তেল। সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।

বাগান থেকে গোলাপ তুলছে এক আফগান তরুণী। ছবি: এএফপি

নানগারহার এমন একটি জায়গা, যেখানে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ২০১৪ সালের পর শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে। তালেবানেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে এখানে। সড়কের পাশে পুঁতে রাখা বোমা, যখন-তখন আত্মঘাতী হামলাসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এখানকার প্রায় নিয়মিত দৃশ্য। এ ছাড়া আফিম চাষে নানগারহার আফগানিস্তানের ষষ্ঠ বৃহত্তম প্রদেশ। দাপ্তরিক হিসাবে, পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এই এলাকায় গত বছর উৎপাদিত হয় ৯ হাজার টন আফিম। তবে দৃশ্য দ্রুতই পাল্টাচ্ছে।

নানগারহারের কৃষক মোহাম্মদ দিন সাপাই জানান, আগে তিনি আফিম চাষ করতেন। কিন্তু সে সময় এখন অতীত। বর্তমানে তিনি গোলাপ চাষ করছেন। তাঁর মতে, গোলাপ চাষে খরচ অনেক কম। পরিশ্রমও কম। সে তুলনায় আয় অপেক্ষাকৃত বেশি। গোলাপ চাষের মৌসুম মে মাসে শেষ হয়। এরপর তিনি জমিতে সবজি চাষ করেন।

গোলাপ তুলছে আফগান কিশোর। ছবি: এএফপি

৫০ বছর বয়সী মোহম্মদ দিন সাপাইয়ের মতো নানগারহারের আট শর বেশি চাষি গোলাপ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। ‘নানগারহারের জন্য গোলাপ’ প্রকল্পের আওতায় তাঁরা আফিমের জগৎ ছেড়ে গোলাপের জগতে পা রেখেছেন। এটি আফগানিস্তান ও জার্মানির যৌথ উদ্যোগ। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের লক্ষ্য আফিমচাষিদের গোলাপ চাষে উৎসাহিত করা।

বাগান থেকে গোলাপ তোলার ধুম। ছবি: এএফপি

এই প্রদেশের ওমর কালা গ্রামের স্কুলশিক্ষক ও গোলাপচাষি শাহ জামান বলেন, এ বছর তিনি গোলাপ চাষ করে এক টন পাপড়ি উৎপাদনের আশা করছেন। কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, গোলাপের খামারও গড়ে উঠছে নানগারহারে।

কৃষকের উৎপাদিত গোলাপের পাপড়িগুলো সংগ্রহের পর যায় নানগারহারের রাজধানী জালালাবাদে। সেখানে প্রক্রিয়াকরণের পর প্রতি ছয় টন পাপড়ি থেকে তৈরি হয় এক লিটার সুগন্ধি তেল। এসব তেল ইউরোপের কয়েকটি দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যায়।

ব্যাগে গোলাপ ভরছেন দুই আফগান ব্যক্তি। ছবি: এএফপি