তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা এটা স্পষ্ট করতে চাই, আফগানিস্তান আর কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়। যারাই এত দিন আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সবাইকে আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি। শত্রুতার দিন শেষ হয়েছে। দেশের ভেতরে বা বাইরে, কোথাও কোনো শত্রু চাই না।’
গত রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মঙ্গলবার প্রথমবার সংবাদ সম্মেলন করে তালেবান। বিবিসির খবর।
২০ বছর ধরে তালেবানের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসা জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই প্রথমবার ক্যামেরার সামনে এলেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী আর ক্যামেরার সামনে জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘২০ বছর সংগ্রামের পর দেশকে আমরা মুক্ত করতে পেরেছি, বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি। পুরো জাতির জন্য আজ একটি গৌরবের মুহূর্ত।’
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদা যোদ্ধাদের এখানে আবার উত্থানের আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে জাবিউল্লাহ বলেন, আফগানিস্তানের মাটি অন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
তালেবানের অধিকৃত এলাকায় অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের খবরে বিষয়ে জানতে চাইলে জাবিউল্লাহ বলেন, ‘দেশজুড়ে পুরো নিরাপত্তা রয়েছে। কেউ কোনো অপহরণ করতে পারবে না। দিন দিন আমরা নিরাপত্তা আরও বাড়াব। আমরা চাই না কেউ দেশ ছাড়ুক। এখানে ক্ষমা করা হচ্ছে। কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নয়।’
বিদেশি বাহিনীদের জন্য এত দিন যারা দোভাষী হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁদের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘কাউকেই শত্রু হিসেবে গণ্য করা হবে না। যেসব তরুণ এখানে বড় হয়েছে আমরা তাদের ছাড়তে চাই না। তারা আমাদের সম্পদ। কেউ তাদের দরজায় টোকা দিয়ে জানতে চাইবে না তারা কার জন্য কাজ করেছে। তারা নিরাপদে থাকবে। কেউ তাদের জেরা বা তাড়া করবে না।’
গণমাধ্যমের কাজ নিয়েও আশ্বস্ত করা হয় তালেবানের সংবাদ সম্মেলনে। জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, বেসরকারি গণমাধ্যম আফগানিস্তানে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তবে সবাইকেই তালেবানের সাংস্কৃতিক কাঠামো মেনে চলতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অধিকার কী হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে জাবিউল্লাহ বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বারবারই বলার চেষ্টা করেছেন ইসলামিক আইনের আওতায় থেকে নারীরা কাজ করতে পারবেন।
জাবিউল্লাহ বলেন, ‘সরকারের গঠনের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন আইনে দেশ চলবে। একটা জিনিস বলতে চাই, আমরা সরকারের গঠনের জন্য গভীরভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ শেষ হলে ঘোষণা করা হবে। সব সীমান্ত আমাদের নিয়ন্ত্রণে।’
জাবিউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দেশ মুসলিম দেশ। এটি ২০ বছর আগে হোক বা আজ হোক। কিন্তু যখনই অভিজ্ঞতা ও পরিপক্বতা বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রসঙ্গ আসে, তখন অবশ্যই এখন ও ২০ বছর আগের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমরা যা করতে যাচ্ছি, সেখানে অবশ্যই পার্থক্য আছে। এটি একটি মূল্যায়নের প্রক্রিয়া।’
অন্য প্রশ্নের জবাবে তালেবানের মুখপাত্র বলেন, ‘আফগানিস্তানে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে আমরা প্রতিদিন মানুষকে ক্ষমা করছি। আমাদের যোদ্ধা, আমাদের জনগণ, আমরা সব দিক ও সব পক্ষকে নিয়ে এক করতে যাচ্ছি। যারা শত্রুপক্ষের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে নিহত হয়েছে, এটা তাদের দোষ। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে পুরো দেশ জয় করেছি। সরকার গঠনের পর সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’