এমপক্স ভাইরাসের কণা
এমপক্স ভাইরাসের কণা

কোয়ারেন্টিনে থাকা এমপক্সে আক্রান্ত এক রোগীর অভিজ্ঞতা

‘আমি খুব অসুস্থ বোধ করছিলাম। ভয়ও পেয়েছি। হাঁটতে পারছিলাম না।’ কথাগুলো এমপক্সের সংক্রমণে আক্রান্ত বুরুন্ডির বাণিজ্যিক রাজধানী বুজুম্বুরার বাসিন্দা স্যামুয়েল এনডুইমানার। আফ্রিকার এই ছোট্ট দেশে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১৭০ জন একপক্সের সংক্রমণে আক্রান্ত বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্যামুয়েল বর্তমানে কিং খালেদ টিচিং হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) ওয়ার্ডে আছেন। সেখান থেকেই তিনি এএফপির সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর মুখ ও শরীরের ওপরের অংশ ফোসকায় ভরে গেছে।

লক্ষণ কেমন ছিল, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্যামুয়েল বলেন, ‘আমার ক্ষুধামান্দ্য হচ্ছিল। জ্বর আসে এবং যৌনাঙ্গে ব্রণের মতো ছোট্ট গোটা হয়। কিন্তু খুব ব্যথা হতো। প্রথমে মনে করেছিলাম ম্যালেরিয়া।’

স্যামুয়েল আরও বলেন, ‘কী থেকে আমি অসুস্থ হলাম, বুঝতে পারছিলাম না। তবে দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছিল।’

পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে এই রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। বুরুন্ডিতে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ১৭১ জন আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কেনিয়া গত শুক্রবার নিজ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত দ্বিতীয় রোগীকে শনাক্ত করেছে। আর প্রতিবেশী উগান্ডায় এ সংখ্যা ৪।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস প্রথম পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এর উপসর্গ অনেকটা জ্বর বা ফ্লুর মতো। বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাস থেকেও অন্য কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারেন।

আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ায় এমপক্স নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

বুরুন্ডি কর্তৃপক্ষ এই প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। এমন সংক্রমিত ব্যক্তিদের যাঁরা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাঁদের একজন চিকিৎসক ওদেতে নসাভিমানা।

ওদেতে এএফপিতে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে রোগীরা খুবই গুরুতর অবস্থায় আসে। অনেকের জ্বর থাকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০২.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। এই রোগে খুব ব্যথা হয় এবং চুলকানি হয়। এতে শরীরে ক্ষত হয়। ফলে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।’

সেন্টার ফর পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনসের জাতীয় পরিচালক লিলিয়ান নেকেনুগুরুতসে বলেন, এই সেন্টার থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে ৫০ জনের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আছে।

লিলিয়ান এএফপিকে বলেন, এ ধরনের রোগী বাড়ছে। দেশটির পার্শ্ববর্তী গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে।

কিং খালেদ টিচিং হাসপাতালে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন স্যামুয়েল এনডুইমানার

মধ্য আফ্রিকার এই দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তথ্যমতে, চলতি বছর কঙ্গোতে এই ভাইরাসে ১৬ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৫৭০ জনের বেশি মানুষের।

বুরন্ডির সেন্টার ফর পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনসের জাতীয় পরিচালক লিলিয়ান বলেন, তাঁরা আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত শনাক্ত করে সঙ্গনিরোধ অবস্থায় নিচ্ছেন। এরপর চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনো এ ধরনের রোগীর মৃত্যু হয়নি। কারণ, আমরা যথেষ্ট সৌভাগ্যবান যে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করতে পারছি।’

ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন স্যামুয়েল বিনা মূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন। এই উদ্যোগের ব্যাপক প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘যাঁরা আশঙ্কা করছেন, তাঁরা এমপক্সে আক্রান্ত। তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেওয়া দরকার। এই মহামারি খুবই ভয়ংকর। খুবই ব্যথা হয়। এ অবস্থায় কী করতে হবে, তা আপনি জানেন না।’

বিবিসির খবরে বলা হয়, এ মুহূর্তে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের কয়েকটি ধরনে সংক্রমণের ঘটনা যুগপৎভাবে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি ধরন বেশি বিপজ্জনক। ‘ক্লেড ১বি’ নামের ধরনটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয়েছে।

‘ক্লেড ১’-এর দুটি ধরন রয়েছে। সুইডেনে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি ‘ক্লেড ১বি’-এর সংক্রমণের শিকার। ধরনটিতে সংক্রমণের প্রথম ঘটনা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় শনাক্ত হয়। তবে এটির সংক্রমণ এখন বুরুন্ডি, কেনিয়া ও রুয়ান্ডাতেও নিশ্চিত হয়েছে।

ইতিপূর্বে ২০২২ সালে এমপক্সের ‘ক্লেড ২’ ধরনের সংক্রমণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। ধরনটি তুলনামূলক মৃদু। সে বছরের জুলাই মাসে ‘ক্লেড ২’ ধরনটি এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশসহ প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ওই সংক্রমণ।